বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষা নিয়ে রাশিয়ার চিঠি : পর্ব -১
বিগত বছর গুলোর মত এ বছরেও রাশিয়ান সরকার মেধাবী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি ঘোষণা করেছে । বিভিন্ন বিষয়ে পঞ্চাশ জনেরও বেশি বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অনার্স , স্পেশালিষ্ট ও মাস্টার্স কোর্সে বৃত্তি প্রদান করবে । রাশিয়ান সরকারের বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচিত ভাবে ডাকছে নবদিগন্তের উদ্বেলিত সূর্যের মত । লক্ষ্য যদি থাকে উন্নত ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় জ্ঞান অর্জন করে একজন ভাল মানুষ হওয়া এবং একই সাথে সফল ক্যারিয়ার গড়া , তবে রাশিয়ান সরকারের শিক্ষা বৃত্তি হয়ে উঠবে সোনায়-সোহাগা । সর্বোপরি বাংলাদেশী মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কোটি টাকার সুযোগ ।
ব্যাচেলর বা স্পেশালিষ্ট কোর্সের বৃত্তির জন্য আবেদন প্রার্থীকে অবশ্যই SSC ও HSC বা সমমানের পরীক্ষায় নূন্যতম প্রথম শ্রেণী পেতে হবে । মাস্টার্স কোর্সের জন্য SSC , HSC বা সমমানের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী এবং অনার্স বা সমমানে নূন্যতম দ্বিতীয় বিভাগ থাকা অত্যাবশ্যক । অতঃপর সর্বোচ্চ GPA ও CGPA এর ভিত্তিতে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মৌখিক ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজনে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ভাবে চূড়ান্ত নির্বাচিত করা হয় । তারপর ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাস চূড়ান্তভাবে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত করে থাকে । ক্ষেত্রবিশেষে , সময়ের সাপেক্ষে উক্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ার ধরণ পরিবর্তনও হতে পারে ।
আবেদন কৃত শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে হয় । প্রথমে শিক্ষার্থীদের সকল সার্টিফিকেট ও মার্কশীট সত্যায়িত করতে হয় যথাক্রমে শিক্ষাবোর্ড/ বিশ্ববিদ্যালয় , শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে । পরবর্তীতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সকল কাগজপত্র রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ করে রাশিয়ান দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করতে হয় । একই সাথে পাসপোর্ট ও জন্ম সনদের ইংরেজি কপিও রাশিয়ান ভাষায় অনুবাদ ও সত্যায়িত করতে হবে । শেষ ধাপে সমস্ত কাগজের নূন্যতম চার কপি নোটারী করতে হবে । এ ছাড়া মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রয়োজন—যাতে আপনার এইচআইভি (HIV) ও অন্যান্য জটিল কিছু রোগ ব্যাধি নেই প্রমাণের জন্য। এবার আপনার সমস্ত কাগজপত্র মোটামুটি তৈরি ।
স্কলারশিপ শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থীকে অবৈতনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগে প্রদান করে । তাছাড়া প্রয়োজনীয় বই বিনামূল্যে ফেরতযোগ্য ও পরীক্ষার ফি প্রদান করতে হয় না । কিন্তু জীবনযাপন , হেলথ – ইনস্যুরেন্স ও অন্যান্য খরচ ছাত্রছাত্রীকেই বহন করতে হয় । জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলক অনেক কম । বাংলাদেশী টাকায় আট-দশ হাজার টাকায় স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করা যায় । বাকিটুকু নিজের উপর । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নামমাত্র মুল্যে আবাসন প্রদান করা হয় । বিদেশি শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নত ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আবাস প্রদান করে থাকে। বলে রাখা দরকার, এখানে একজন মেয়ে শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে অধিক নিরাপত্তা, অগ্রাধিকার ও সম্মান পেয়ে থাকে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাত খরচ বাবদ কিছু বৃত্তি প্রদান করা হয় । তাতে টুকিটাকি খরচ চলে যায় ।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রাশিয়াতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে । যা ইউরোপ আমেরিকায় সম্ভব । সেপ্টেম্বরের শুরুতে ঐতিহ্য ও রীতি অনুসারে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়। বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রথমে একবছর রাশিয়ান ভাষায় পড়ার জন্য প্রস্তুতিমূলক কোর্স সম্পন্ন করতে হয় । এ সময় রাশিয়ান ভাষা , রাশিয়ান ভাষায় পদার্থ , গনিত, রসায়ন ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয় । প্রস্তুতিকোর্স সম্পন্ন হলেই মূল কোর্সে শিক্ষার্থীদের রাশিয়ান ভাষায় পাঠ্যক্রম শুরু হয় ।
নতুন একটি ভাষা ও সংস্কৃতিতে নিজের জ্ঞান এর দ্বার উন্মোচিত করার জন্য সুযোগ আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । মহাবিশ্বের মহাযজ্ঞের নানা নিত্য- নতুন অনেক কিছু শিখার ও দেখার । শিক্ষা , ভ্রমন ও জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানের পূর্ণতা অর্জন । তাছাড়া আধুনিক যোগ্যতা সম্পন্ন ক্যারিয়ারের গড়তে ইংরেজির পাশাপাশি অন্য আরেকটি ভাষা জানার গুরুত্ব বর্ণনাতীত ।
সম্পূর্ণ তদারকি , প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা , তথ্য ও সার্বিক সহযোগিতা এবং ভিসার অন্য্যন্য সকল কার্য সম্পাদনের জন্য ঢাকাস্থ রাশিয়ান বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র , যা আপনাদের অপেক্ষায় । কেন্দ্রটি রোড নং– ১০ , ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন সড়ক , ধানমন্ডিতে অবস্থিত । রাশিয়ান সরকারের বিজ্ঞান ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়য়ের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে ।
তাই এখনই সময় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার । বৃত্তির জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ৩১ শে মার্চ ২মস্কো, রাশিয়া০১৬ ।
লেখক | হামিদুল হক I শিক্ষার্থী , জাতীয় পরমাণু গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় I ।
ইমেইল: hamidulhaque1993@yahoo.com