নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় দুই যুগপূর্তি
দেশের প্রথম ও স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ তার গৌরবময় পথচলার দুই যুগ পূর্ণ করেছে। এই সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চ শিক্ষায় অনন্য শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেছে। দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে ৩ মার্চ থেকে ১০ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইযুগ পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিল্পপতি এমএ কাশেমের সভাপতিত্বে অংশ নেন নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনসহ কয়েকটি দৈনিকের সহ-সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা।
অনুষ্ঠানে এমএ কাশেম বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ১৯৮০ দশকের শুরুর দিকে বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার ধারণা আমরাই প্রথম দিয়েছিলাম। ৮০ দশকের শেষ দিকে আমরা কতিপয় ব্যক্তি, দেশে উচ্চ শিক্ষিত মানব সম্পদ তৈরী, মেধা পাচার রোধ, কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এবং কর্মসংস্থান এর লক্ষ্যে বেসরকারী খাতে উচ্চ শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি এবং বিশ্ব মানের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। এরই ধারাবাহিকতায়, প্রত্যাশিত সেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯২ সনে দেশের শিক্ষানুরাগী শিল্পপতি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, খ্যাতনামা জনহিতৈষী ব্যক্তি এবং প্রথিতযশা পদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অলাভজনক, অরাজনৈতিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে তখন কোন আইন ছিল না। ফাউন্ডেশনের বিরামহীন প্রচেষ্টার ফলে তৎকালীন পার্লামেন্ট দেশে সর্ব প্রথম প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট ১৯৯২ অনুমোদন করে এবং ফাউন্ডেশন, উক্ত এ্যাক্টের আলোকে, ০৫ নভেম্বর ১৯৯২ এ দেশের সর্ব প্রথম এই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অর্থাৎ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার অনুমোদন লাভ করে এবং ১৯৯৩ এ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে, ফাউন্ডেশন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট ২০১০ এর আলোকে, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট গঠন ও ডীড অব ট্রাস্ট নিবন্ধন করে ইউনিভার্সিটি পরিচালনার পুরো দায়িত্ব নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্ট ও এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর নিকট অর্পণ করে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার মাত্র ২ যুগ (২৪ বছর) এর স্বল্প সময়ের এই ব্যবধানে, দেশের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ও এতদঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার একটি অনন্য শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও স্বীকৃতি লাভের পাশাপাশি এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। বসুন্ধরায় মোট ২০ বিঘা জমির উপর, প্রায় ২০,০০০ এর অধিক ছাত্র-ছাত্রীর স্থান সংকুলানসম্পন্ন, ১৩.০০ লক্ষ বঃফুঃ আয়তনবিশিষ্ট এবং অত্যাধুনিক যাবতীয় সুবিধাসম্বলিত, দৃষ্টিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসটি প্রতিষ্ঠিত। ১১০টি আধুনিক ক্লাসরুম এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চমানের ব্যবহারিক, প্রায়োগিক ও কারিগরি বিষয়ে জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে কম্পিউটার, এনভায়রনমেন্টাল, ফার্মেসী, জীব বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিজ্ঞান বিষয়ক অত্যাধুনিক বিভিন্ন ধরণের ল্যাবরেটরীজসমূহ। নর্থ সাউথের লাইব্রেরী দেশের সর্বপ্রথম অন-লাইন সুবিধাসম্পন্ন ডিজিটাল লাইব্রেরী। লাইব্রেরীটি সর্বশেষ সংস্করণের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টেক্সট বইসহ, ৫০,০০০ অনলাইন টেক্সটবই এবং ৪০,০০০ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনলাইন জার্নাল ও গবেষণাগ্রন্থে সমৃদ্ধ। এই ইউনিভার্সিটির রয়েছে প্রায় ১২০০ আসন বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ও মনোমুগ্ধকর একটি অডিটোরিয়াম। অন্যান্য বিভিন্ন সুবিধাদির মধ্যে রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা লাউঞ্জ, রিক্রিয়েশন সেন্টার, জিম, হেলথ ক্লাব ইত্যাদিসহ ইনডোর গেমস এর সুযোগ-সুবিধা।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন সাফল্য অর্জনের পেছনে মিডিয়ার ভূমিকাও ছিল প্রশংসনীয়। এ সাফল্য ও জয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির একার নয়। এটি সমগ্র বাংলাদেশের। ২৪ বছরে আমরা এমন কিছু করেছি যা অনেক দেশে ১০০ বছরেও হয় না। আমাদের এই অর্জনকে তুলে ধরতেই ১০ দিনব্যাপী গৌরবের দুই যুগ পূর্তি উদ্যাপনের এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এমএ কাশেম বলেন, বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেশে উচ্চ শিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরি, মেধা পাচার রোধ, কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অনেকেই মানসম্মত উচ্চ শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা দেশের জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর। দেশের এই অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী দিনে এই অগ্রযাত্রা আর সমৃদ্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই যুগের অগ্রযাত্রাকে অভিনন্দন জানিয়ে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ৯০ দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। সেখান থেকে নর্থ সাউথের উদ্যোক্তা পার হয়ে আসছেন। সে জন্য অভিনন্দন। ২২ হাজার ছাত্র আছে। অনেক ঘটনা ঘটে, অভিযোগ আসে, সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট আসে কিন্তু ব্যাখ্যা দেয়ার কোনো লোক থাকে না। এ জন্য আপনাদের প্রেস উইংকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার ছেলেকে যখন নর্থ সাউথে ভর্তি করাই তখন সবাই নিষেধ করেছিল। ছেলের ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাবে- এমন কথাও বলেছে অনেকে। নর্থ সাউথ থেকে পড়াশুনা করে আমার ছেলে এমফিল, পিএইচডি করে এখন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সেকেন্ড ম্যান। তাই আমি নর্থ সাউথের কোয়ালিটির প্রতি আস্থা রাখি। পাশাপাশি নর্থ সাউথ এগিয়ে যাওয়া মানে আমাদের এগিয়ে যাওয়া।
কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমার দুই মেয়েই এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করেছে। বড় মেয়েটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করছে। দ্বিতীয় মেয়েটি এখানে বর্তমানে বিবিএ করছে। আমি মনে করি, মানের দৃষ্টিতে যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় নর্থ সাউথ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বসুন্ধরায় ২০ বিঘা জমির উপর স্থায়ী ক্যাম্পাসে বর্তমানে ২২ হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছেন। এছাড়া, পূর্বাচলে ২৫০ বিঘা জমির উপর আরেকটি ক্যাম্পাস স্থাপন করা হবে। জমির কেনার সব ধাপ প্রায় শেষের দিকে বলে জানান আরেক ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও শিল্পপতি এমএ হাসেম। মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মো. শাহজাহান, বেনজির আহমেদ, রেহেনা রহমান, ইয়াসমিন কামাল, প্রফেসর ড. গুরু গোবিন্দ গোস্বামী, নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
১০ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি: নর্থ সাউথের ২ যুগের বিভিন্ন অর্জনকে তুলে ধরতে ৩রা মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত ‘‘গৌরবের ২ যুগপূর্তি উদ্যাপন’’ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের প্রভাব ও ডিজিটাল হিউম্যানিটিজসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সেমিনার ও পাবলিক লেকচার দেবেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্কলার ও শিক্ষাবিদরা। এছাড়াও ১০ দিনব্যাপী পূর্তি উদ্যাপন অনুষ্ঠানে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কালারফুল র্যালি, খেলাধুলা, অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলকে সংবর্ধনা, আন্তর্জাতিক বিতর্ক, ড্রামা ইন্টারন্যাশনাল ইভিনিং, কনফুসিয়াস, বুক পাবলিশিং, ক্লিন ঢাকা সিটি অ্যাওয়ারনেস, সিএসআর ইত্যাদি প্রোগ্রাম। এসব অনুষ্ঠানে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, এমপি, ঢাকা সিটির মেয়র, সিনিয়র নাগরিক এবং দেশ-বিদেশের স্কলাররা বক্তব্য প্রদান করবেন।#
লেখাপড়া২৪.কম/আরএইচ