রংধনুর রং

IMG_20160226_153030ভালবাসা মনে হয় রংধনুর মত। রংধনুর যেমন অনেক রং ভালোবাসার রং ঠিক তেমনই। কখনো তা সুখের ভেলা হয়ে মনের আকাশে ভেসে বেড়ায় আবার কখনো ঝড় হয়ে এসে জীবনটাকে ধ্বংস করে দেয়। ভালবাসা বসন্তে দক্ষিণা বাতাসের মত কারো মনে দোলা দেয়নি এমন লোক হয়তো খুজে পাওয়া যাবে না। তবে কখন কিভাবে যে একজন অন্যকে ভালবেসে ফেলে বোঝা দায়। কেউ ভালবেসে ফেলে প্রথম দেখাতে আবার কখনো একসাথে পথ চলতে চলতে মানুষের মনে ভালবাসার জন্ম নেয়।

 

কেউ তার মনের মানুষটিকে কাছে পায় আবার কেউ পায় না তবে ভালবাসা থেমে থাকে না। সুমন পারভেজের খুব কাছের বন্ধু। ও মিনুকে ভালোবাসে কিন্তু সাহস করে বলতে পারছে না। কয়েকদিন ধরে মিনুর সামনে গেলে ওর হাত পা কাঁপছে। মিনু খুব ভালো মেয়ে। চিকন গড়নের শ্যাম বর্ণের মিষ্টি মেয়েটা প্রথম দেখাতেই যে কাউকে পাগল করে দিতে পারে। গত মাসে সুমন পারভেজকে খুব করে ধরেছিল মিনুকে তার মনের কথা জানাতে হবে। তারপর দুজনে মিলে প্লান করেছে কিভাবে বলা যায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে পারভেজ মিনুকে জানিয়ে দিয়েছে সুমনের ভালোবাসার কথা। তারপর? বাকীটা ইতিহাস! কিছুদিন হল ওরা তিনজন আগের মত আর বুড়ি গঙ্গার তীরে বেড়াতে যায় না। হচ্ছে না টিএসসি কিংবা ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডা দেওয়াটা।

 

তবে মাঝে মাঝে কোন পার্কে বা ভালো কোন রেস্টুরেন্টে যায় ওরা দুজনে: সুমন আর মিনু। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ব্যাপী অনুষ্ঠান হচ্ছে। সবাই অনেক সেজেগুজে বের হয়েছে। পারভেজের রুমমেট পলাশ তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে সেই সকালেই বের হয়েছে। শুধু পলাশ নয়, অনেকেই আজ ঘুরতে বের হবে। কেউ বা একধাপ এগিয়ে। পছন্দের মানুষকে ঘুরতে নিয়ে যাবে দূরে কোথাও। কিন্তু পারভেজ সারাদিন রুমে শুয়ে আছে। বাইরে যেতে মন চাইছে না ওর। তবে এক বন্ধুর জোরাজুরিতে দুপুর বেলা ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হল। কিছুদূর যাওয়ার পর থমকে দাড়াল পারভেজ। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন। সকাল বেলা, একটু পরে ওরিয়েনটেশন শুরু হবে। সবাই অচেনা কোথাও কেউ পরিচিত নেই। করিডোরের এক পাশে দাড়িয়ে আছে পারভেজ।

 

Post MIddle

বাম পাশে চোখ যেতেই চোখে পড়ল চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা মিনুকে। হয়তো ফাস্ট ইয়ারের ই হবে ভাবলো সে। কিন্তু অপরিচিত একটি মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলবে সে। আগ বাড়িয়ে একটি মেয়ের সাথে কথা বলা কি ঠিক হবে। কিছুই ভেবে পাচ্ছে না ও। একটু সাহস করে সামনে এগিয়ে গেল । জিজ্ঞাসা করল ‘আপনি কোন ইয়ায়ের?’ তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একটু পরে সুমন এসে যোগ দেয়। সেই প্রথম দিন থেকেই ওরা ভলো বন্ধু। তারপর কত যে আড্ডা হৈ হুল্লড় হয়েছে তার হিসেব নেই। প্রায় চার বছর হয়ে গেছে এর মধ্যে অনেক মান অভিমান হয়েছে কিন্তু বন্ধুত্ত্বটা অটুট আছে। বন্ধুত্ব থেকে কখন যে মিনুকে ভালোবেসে ফেলেছে বুঝতে পারে নি পারভেজ। কিন্তু কখনো ভালোবাসার মানুষটিকে মনের কথা বলা হয়নি।

 

ভেবেছিল এবারের ভালোবাসা দিবসে মিনুকে মনের কথা জানাবে। তারপর অনার্সটা শেষ করে ভালো একটা চাকরি পেলে মিনুকে বিয়ে করে ছোট্ট একটা ঘর বাঁধবে। কিন্তু তা আর হয়নি। বন্ধুত্বের জন্য নিজের ভালোবাসাকে উৎসর্গ করেছে সে। যাকে সে ভালোবাসে বন্ধুেত্বর জন্য তাকে পাওয়া হল না। আজ তার চোখের সামনে মিনুর হাত ধরে গল্প করছে সুমন। লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে মিনুকে অনেক সুন্দর লাগছে। শাড়িটা ওকে সুমন উপহার দিয়েছে। বুকের ভেতর যেন কেমন করছে। ভেতরটা যেন ছিড়ে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে। পা টা সামনে এগোচ্ছে না, সমস্ত শরীর শীতল হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ………….!! থাক। হয়তো অজানাই থাকবে।

 

লেখাপড়া২৪.কম/জাবি/তহিদুল/এমএএ

পছন্দের আরো পোস্ট