শেকৃবিতে অবমুক্ত হল নতুন সবজি টমাটিলো
সাউ টমাটিলো -১ ও সাউ টমাটিলো-২ নামক দুটি নতুন সবজি জাত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃষক পর্যায়ে অবমুক্ত করা হয়েছে । টমাটিলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স এন্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নাহিদ জেবা দীর্ঘদিন ধরে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বাংলাদেশের ৫ টি অঞ্চলে ট্রায়াল দেওয়ার পর আশানুরূপ ফলাফল পাওয়ায় জাত দুটি অবমুক্ত করেন।
সাউ টমাটিলো ১ সবুজ রঙের এবং সাউ টমাটিলো ২ বেগুনী রঙের। কীটনাশকমুক্ত চাষাবাদের সুযোগ ও ফলন বেশি পাওয়ায় সবজিটি নিয়ে আশান্বিত গবেষক-কৃষক সবাই। টমাটিলোতে টমেটোর তুলনায় একমাস আগেই ফুল ও ফল ধরে। সল্প সময়ের মধ্যে এই ফসলটি পাওয়া যাবে বিধায় কৃষকগণ মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে অন্য আরেকটি ফসল চাষ করতে পারবে। হেক্টর প্রতি সাউ টমাটিলো ১ এর ফলন ৭০ টন এবং সাউ টমাটিলো ২ এর ফলন ৩৫ টন। যা দেশীয় টমোটোর চেয়ে দ্বিগুন।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. নাহিদ জেবা বলেন, কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করতে নতুন এ সবজিটির মাল্টি লোকেশনাল ইল্ড ট্রায়াল (জাত অবমুক্ত করার একটি প্রক্রিয়া) সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামের পটিয়া, ঝিনাইদহের দত্তনগর, দিনাজপুরের চেহেল গাজী মাজার ও পটুয়াখালীর দশমিনাতে টমাটিলো চাষ করে আশানুরূপ ফল পাওয়া জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে কৃষকপর্যায়ে এটি অবমুক্ত করা হয়েছে।
ড. নাহিদ জেবা বলেন, টমাটিলো দেখতে আমাদের দেশের একটি সাধারণ আগাছা “ফোসকা বেগুন” এর মত বৃতির দ্বারা মোড়ানো। ভিতরের ফলটি কাঁচা টমেটোর মত। পরিপক্ক অবস্থায় মোড়ানো বৃতি ফেটে যায় এবং ফলটি বেরিয়ে আসে, তখন এটিকে হলুদাভ দেখায়। বৃতিটি ধীরে ধীরে বাদামি বর্ণ ধারন করে। টমাটিলোর ভিতরের অংশ ভরাট, টমেটোর মত কিছুটা ফাঁপা ও জলীয় নয়। খেতে সুস্বাদু এবং টক-মিষ্টি। সবুজ, সতেজতা ও টার্ট ফ্লেভার, রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। টমাটিলোর ভিতরের অংশে রসালো পাল্প ও ক্ষুদ্রাকৃতির বীজ থাকে।
টমাটিলোর উৎপত্তি মেক্সিকোতে। বাংলাদেশে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক্স এন্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. নাহিদ জেবা এই ফসলটির সর্বপ্রথম বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ায় এর পরিক্ষামূলক চাষ করেন। ২০১৩ সাল হতে তিনি এর বিভিন্ন গবেষণা করেন। তিনি জানান, উৎপত্তি মেক্সিকাতে হলেও আমাদের দেশীয় জলবায়ু ও মাটি টমাটিলোর অনুকুলে থাকায় গড় উৎপাদন মেক্সিকোর তুলনায় প্রায় আড়াই গুন বেশী। এদিকে প্রচলিত টমেটো চাষে প্রয়োজন হয় মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কিটনাশক । অন্যদিকে টমাটিলোতে কোনোরকম কিটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার না করে ই ফলন পাওয়া যাচ্ছে হেক্টর প্রতি ৭০ টন।
কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই টমাটিলো উৎপাদন করায় একদিকে এর চাষ প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে পরিবেশ বান্ধব , অন্যদিকে কৃষকের উৎপাদন খরচ ও কমে যাবে বহুগুনে। জমি চাষের সময় কেবল বেসাল ডোজ হিসেবে সামান্য রাসায়নিক সার ও গোবর ব্যবহার করা হয়। প্রতি গাছে ৪-৫ কেজি ফলন হওয়ায় বাঁশের খুটি প্রয়োজন হয়। একই মাপের টমেটো ও টমাটিলোর তুলনা করলে দেখা যায় টমাটিলোর ওজন বেশী কারন টমাটিলোর ভিতরটা ফাঁপা নয়। টমাটিলোর গায়ে বৃতির আবরন থাকায় পোকামাকড়, টমেটোর মত পাতা মোড়ানো রোগ ও ভাইরাস রোগ থেকে মুক্ত থাকে।
বশিরুল ইসলাম: জনসংযোগ কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
লেখাপড়া২৪.কম/আরএইচ