‘অদ্ভুত এইসব হালচাল’ কাব্য গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

মোড়ক (1)শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থ মেলার নজরুল মঞ্চে মুক্তভাষ ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত কবি নাজমা পারভিনের ‘অদ্ভুত এইসব হালচাল’ কাব্য গ্রন্থের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট গবেষক, প্রাবন্ধিক এবং বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক ও প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শওকত আরা হোসেন, বাংলা একাডেমীর বর্তমান পরিচালক মিজ শাহিদা খাতুন, বাংলা একাডেমীর সহকারী পরিচালক ও বিশিষ্ট কবি শাহেদ মমতাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।

 

কবি শাহেদ মমতাজ বলেন, বর্তমান সমাজের নানাবিধ অসংগতির সমন্বয় ঘটেছে বইটিতে এবং বইটির ছন্দের প্রসংশা করেন তিনি। কবি নাজমা পারভিন তার লেখার বিষয়ে বলেন যে তিনি চলার পথে যা দেখেন তাই নিয়েই লিখেন এবং ভবিষ্যতেও লিখে যেতে চান। বাংলা একাডেমীর বর্তমান পরিচালক জনাব সাহিদা খাতুন নতুন এ কবিকে সংস্কৃতির এ জগতে আসার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আগামী বই মেলায়ও তার এধরণের সৃষ্টিশীল কবিতার বই প্রকাশ হবে সে আশা ব্যক্ত করেন। অধ্যাপক ড. শওকত আরা হোসেন বলেন কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থেই সমাজ ও নাগরিক জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের দিকনির্দেশনা রয়েছে। তিনি কবিকে লেখা চালিয়ে যেতে উৎসাহ প্রদান করেন।

 

অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, শুধুমাত্র ছন্দের মিলন হলেই কোন লেখাকে কবিতা বলা চলেনা। কবিতায় জীবনের কথা থাকতে হবে, সমাজের কথা থাকতে হবে। কবিতাকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে অবদান রাখতে হবে। সে সব দিক থেকে নবীন কবি নাজমা পাভিনের অদ্ভূত এইসব হালচাল অনেকখানি সার্থক কাব্যগ্রন্থ। তিনি কবিকে এ সৃষ্টিশীল কাজ চালিয়ে যেতে বলেন।

 

বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ তাঁর বক্তব্যে বলেন নাজমা পারভিন একজন কর্মজীবী মহিলা হিসেবে যে পথে এগিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে একটি দুঃসাহসিক যাত্রা। সবাই কবিতা লেখেন তবে কেউ কেউ কবি হন। তিনি নাজমা পারভিনের অদ্ভূত এইসব হালচাল বইয়ে ছন্দের তালে তালে কাব্যের দেখা পেয়েছেন। প্রেম ভালবাসা ও প্রকৃতি ছাড়াও নিরেট সামাজ ও নাগরিক জীবনের নানাবিধ বাস্তবতাকে নিয়েও যে কাব্য রচনা হতে পারে তার অনন্য উদাহরণ অদ্ভূত এইসব হালচাল। তিনি আশা করেন বইটি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষেরই একটি চিন্তার খোরাক যোগাতে সক্ষম হবে। আগামীতেও কবির এধরণের আরও বই প্রকাশ হবে সে আশা ব্যক্ত করেন।

 

অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন বাংলা একাডেমীর কর্মকর্তা আবিদ করিম মুন্না। তিনি  অনুষ্ঠানের শেষপ্রান্তে কবির মানুষ কবিতাটি উপস্থিত সুধী সমাজকে আবৃত্তি করে শোনান এবং বইটি অমর একুশে বই মেলার ৩০৩ ও ৩০৪ নং স্টল মেরিট ফেয়ার প্রকাশনে পাওয়া যাচ্ছে বলে সবাইকে অবহিত করেন।

 

মানুষ

শিক্ষক একদিন ছাত্রকে শুধালেন

মানুষের সংজ্ঞাটা বল দেখি শৈলেন ?

শৈলেন ভেবে কয় প্রশ্নটা সোজা নয়

মানুষ এক প্রজাতি যার কোন জুড়ি নাই।

স্বজাতির হাতেসে খুন হয় নিত্য

বাহু বলে কেউ রাজা, কেউ হয় ভৃত্য ।

Post MIddle

দেহ খানা অতিকায় মন যেন পিঁপড়ের

স্বার্থের পিছে তারা দেয় দৌড় ইঁদুরের ।

শুনে গুরু চমকান, ছাত্রকে ধমকান

চুপকর, চুপকর, বলিনি কি বারবার

সৃষ্টির সেরাজীব, বিবেকের সে আধার ?

শিস্য এবারে কয় সেকথা মিথ্যে নয়

তবে সবই পুস্তকে, বাস্তবে মিল নাই ।

মানুষ আর মানবতা আজ কেউ কারো নয়,

সকলেরই মুখে এক, মনেতার লেশ নাই।

 

‘অদ্ভুত এইসব হালচাল’ কবি নাজমা পারভিনের প্রথম কাব্য গ্রন্থ । গ্রন্থটিকে কবিতা কিংবা ছড়ার বই দু’টি নামেই ডাকা যায়। বইটি সামগ্রিক ভাবে একটি গ্রন্থ হলেও বইয়ের কবিতাগুলো কয়েকটি অংশে বিভক্ত। অংশগুলোর মধ্যে দেশ ও দশ, মা ও বাবা, চাকরি বাকরি, নারী ও পুরুষ, ডিজিটাল হালচাল ইত্যাদি বিষষভিত্তিক সর্বমোট ৭৮ টি কবিতা রয়েছে। প্রতিটি কবিতা বর্তমান সমাজের এক একটি চিত্রকে পাঠকের চোখের সামনে তুলে ধরে। কবিতাগুলোতে ছন্দের আড়ালে সমাজ ও নাগরিক জীবনের সমসাময়িক বাস্তবতা ও অসংগতিকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের আশ্রয়ে সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে ।

 

বইটি কবির প্রথম প্রকাশনা হলেও ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে এবং পাঠকের চাহিদার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় সংস্করণের কাজ চলছে। মুক্তভাষ ফাউন্ডেশন কর্তৃক বইটি প্রকাশিত এবং অমর একুশে বই মেলার ৩০৩ ও ৩০৪ নং স্টল মেরিট ফেয়ারে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। কবির পৈতৃক বাড়ি মাগুরা জেলার এক নিভৃত পল্লীতে। কবি ব্যক্তি জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ শেষে বর্তমানে ৩১তম বিসিএস পরিবারের একজন সদস্য এবং বইটি ৩১তম বিসিএস পরিবারের সম্মানিত সদস্যদেরকে উৎসর্গ করা হয়েছে।

 

লেখাপড়া২৪.কম/আরএইচ 

পছন্দের আরো পোস্ট