নাজমা পারভিনের কাব্যগ্রন্থ “অদ্ভূত এইসব হালচাল”
‘অদ্ভুত এইসব হালচাল’ কবি নাজমা পারভিনের প্রথম কাব্য গ্রন্থ । গ্রন্থটিকে কবিতা কিংবা ছড়ার বই দু’টি নামেই ডাকা যায়। বইটি সামগ্রিক ভাবে একটি গ্রন্থ হলেও বইয়ের কবিতাগুলো কয়েকটি অংশে বিভক্ত। অংশগুলোর মধ্যে দেশ ও দশ, মা ও বাবা, চাকরি বাকরি, নারী ও পুরুষ, ডিজিটাল হালচাল ইত্যাদি বিষষভিত্তিক সর্বমোট ৭৮ টি কবিতা রয়েছে। প্রতিটি কবিতা বর্তমান সমাজের এক একটি চিত্রকে পাঠকের চোখের সামনে তুলে ধরে। কবিতাগুলোতে ছন্দের আড়ালে সমাজ ও নাগরিক জীবনের সমসাময়িক বাস্তবতা ও অসংগতিকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের আশ্রয়ে সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে ।
দেশ ও দশ অংশের কবিতাগুলো সরাসরি সমাজের বিভিন্ন বাস্তবতা ও বর্তমান সমাজের নানাবিধ অসঙ্গতি এবং তা থেকে পরিত্রানের আকুতি দেশ ও দশ অংশের মূল উপজীব্য। যেমন ফরমালিন কবিতায় বলেছেন, রুখে দিয়ে মনের পচন আনলে সেই সুদিন-সমস্বরে বলব তখন জয় ফরমালিন ।
চাকরি বাকরি অংশে গণসেবক বা সরকারি চাকুরের নানাধরণের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, একজন গণসেবকের দায়-দায়িত্ব , চাকুরির সেকাল এবং চাকুরির একাল (ডিজিটাল যুগোর ছোয়া) অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় ব্যক্ত হয়েছে। যেমন কষাই ডাক্তার কবিতার একটি পক্তি- জনগনের টাকায় নাকি-পড়েছি শুধুই আমরা-তাইতো রোগী মরলে কভু-তোলে মোদের চামড়া।——–কেউ জানেনা কত শ্রমে-একটা এমন কষাই হয়।
মা ও বাবা অংশে সন্তানের জন্য পিতা-মাতার ত্যাগ্যের চিত্র তুলে ধরে সন্তানের দায়িত্ব কী হওয়া উচিৎ সে বিষয়ের একটি দিক নির্দেশনা ছন্দের তালে তালে প্রকাশ পেয়েছে। কবিতায় মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের অবহেলা কবির কোমল হৃদয়কে ব্যাথিত করেছে। যেমন পিতার চিঠি কবিতায় লিখেছেন,ফেসবুক, ডিএসএলআর-আর যা লাগে কিনো-রক্ত বেইচা পয়সা দিমু-চিন্তা নাই কোনো।
নারীর স্বাধীনতা ও সমাজের তাদের অবদান রাখতে হলে কিভাবে নারীকে সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কবিতায় নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থিত না হয়ে শালীনতার সাথে একজন মানুষ পরিচয়ে সমাজের সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণের আহবান জানানো হয়েছে। পুরুষেরও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আশা ব্যক্ত হয়েছে। যেমন আহবান কবিতায় উল্লেখ রয়েছে, মেয়েরে তুই শোন- লোভের বশে পণ্য রূপে-বিকোশ নে তুই বোন।
ডিজিটাল এই যুগে যুব সমাজ ও শিশুদের প্রযুক্তির অপব্যবহার হতে রক্ষা পাওয়ার বিষয়টি কবিতার ছন্দে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন ডিজিটাল সংসার এ বলেছেন-বাবা থাকে ভাইবারে-মা ফেসবুক-ছেলে পায় মোবাইলে-গেম খেলে সুখ।
বইয়ের প্রতিটি কবিতার অন্তমিল লক্ষ্য করার মত। মূলবিষয়বস্তু সাধারণ পাঠকের কাছে পৌছে দিতে অতি সরল ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। কঠিন কঠিন বিষয়কে এত সরলভাবে বলে ফেলা যায় বইটি না পড়লে বোঝা যাবে না। আশা করা যায়, বইটি সমাজের সকল মত ও পথের মানুষের হৃদয়কে কিছুটা হলেও নাড়া দিতে সক্ষম হবে।

বইটি কবির প্রথম প্রকাশনা হলেও ইতোমধ্যে পাঠক সমাজে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে এবং পাঠকের চাহিদার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় সংস্করণের কাজ চলছে। মুক্তভাষ ফাউন্ডেশন কর্তৃক বইটি প্রকাশিত এবং অমর একুশে বই মেলার ৩০৩ ও ৩০৪ নং স্টল মেরিট ফেয়ারে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
কবির পৈতৃক বাড়ি মাগুরা জেলার এক নিভৃত পল্লীতে। কবি ব্যক্তি জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ শেষে বর্তমানে ৩১তম বিসিএস পরিবারের একজন সদস্য এবং বইটি ৩১তম বিসিএস পরিবারের সম্মানিত সদস্যদেরকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
-কবিতা-
—–অদ্ভুত হালচাল—
আমাদের প্রিয় দেশ
অদ্ভুত হালচাল
যে দিকেই চোখ যায়
অনিয়মের বেড়াজাল।
ফুটপাত চলে গেছে
হকারের দখলে
নদী জলশূণ্য
ঢেউয়ের বদলে।
সরকারি পার্ক যত
নেশাখোরের আবাসন
খোলা মাঠে তরুণেরা
দেয়ানেয়া করে মন।
অসহায় শিশুগুলো
যাবে কোথা খেলতে?
কোনখানে পাবে ওরা
ডানা মেলে উড়তে ?
মোবাইল, ল্যাপটপ
আর কত চোখে সয়!
কচি সোনার এভাবে
কত হবে মেধা ক্ষয়?
অলিগলি সবখানে
বিল্ডিং এ একাকার
নেই এতটুকু জমি
শিশুদের খেলবার,
শিশুরাই বড় হয়ে
গড়বে এ দেশটা,
এই কথা মনে রেখে
গড় পরিবেশটা।