নোবিপ্রবিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

21-february-16-2প্রতি বছরের ন্যায় এবারো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপন করা হয়েছে অমর একুশে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচীর। রাত ১১.৪৫টায় (২০ ফেব্রুয়ারী) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান। সকাল ৮টায় প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান জাতীয় পতাকা উত্তোলন (অর্ধনমিত) ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আবুল হোসেন কালো পতাকা উত্তোলন করেন। পতাকা উত্তোলনের পর অনুষ্ঠিত হয় একুশে র‌্যালি; র‌্যালি শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন নোবিপ্রবি জাতীয় দিবস উদ্যাপন কমিটি, বিভিন্ন বিভাগ, ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলের প্রভোস্ট, হযরত বিবি খাদিজা হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল বডি, শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স এসোসিয়েশন, কর্মচারীবৃন্দ সহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল থেকেই কালো ব্যাজ ধারণ করেন। কর্মসূচীসমূহে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীগণ অংশগ্রহণ করেন; সকলের মুখে মুখে উচ্চারিত হয় শ্বাশত সুর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি?’

 

সকাল ৯টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটোয়ামে জাতীয় দিবস উদ্যাপন কমিটির সভাপতি উপ-উপাচার্য প্রফসর ড. মো: আবুল হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মুক্ত আলোচনা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য প্রফেসর ড. এম অহিদুজ্জামান, বিশেষ অতিথি হিসেবে রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো: মমিনুল হক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি জনাব মেহেদী মাহমুদুল হাসান ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব তারেক মো: রাশেদ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সভায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখা হয়। সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন কমিটির সদস্য-সচিব জনাব আফসানা মৌসুমী।

 

উপাচার্য তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ১৯৪৭ সালের পর থেকে দেশকে ভালোবেসে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন তাঁদের প্রত্যেককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, একুশ আমাদের চেতনা, একুশ আমাদের অহংকার এবং একুশ আমাদের প্রেরণা; শুধু বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে বললে হবে না; একুশের চেতনাকে বুকে লালন করতে হবে এবং হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে থাকে; সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও ক্রমেই বঞ্চনার শিকার হতে থাকে বাঙালি। সম্পদ ও অধিকার কেড়ে নিয়েও তারা ক্ষান্ত হয়নি, আক্রমন শুরু করে বাঙালীর মুখের ভাষার উপর। তারা উর্দুকে জাতীয় ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলো, ফলশ্রুতিতে রুখে দাঁড়ায় পূর্ব বাংলার জনগন। তারা পাকিস্তানের মোহ ত্যাগ করে ১৯৪৮ সালে শুরু করে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার আন্দোলন যা ১৯৫২ সালে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে; ক্রমান্বয়ে এ আন্দোলন সারা পূর্ববাংলায় ছড়িয়ে পড়ে; সরকারের ভিত কেঁপে উঠে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে আন্দোলনের গলিপথ। ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয় বাংলার দামাল ছেলে রফিক, শফিক, বরকত, সালাম ও জব্বার। তিনি আরও বলেন, এভাবেই বাংলার দামাল ছেলেদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে পেরেছি এবং এটি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্ব সভায় স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

 

Post MIddle

রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো: মমিনুল হক তাঁর বক্তব্যে সকলকে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে সভা সেমিনারে বক্তব্য বিবৃতিতে একুশের চেতনার কথা বলি কিন্তু আমাদের সকলের কর্মক্ষেত্রে তার দৃষ্টান্ত পাওয়া খুঁজে পাওয়া যায়না। তিনি শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সকলকে স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে শুদ্ধ বাংলা ভাষার প্রচলন করতে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান এবং সকল ক্ষেত্রে বাংলাভাষা প্রচলনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

 

অন্যান্য বক্তাগণ ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী বাংলার দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন করার আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, আমরা দেশের সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন করতে পারলেই কেবল বায়ন্নর শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।

 

নোবিপ্রবিতে আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানমালায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিলো স্বতস্ফুর্ত। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।#

 

লেখাপড়া২৪.কম/আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট