পরীক্ষায় বসতে পারছে না রাবি আইনের ৯৫ শিক্ষার্থী

1fa5a72a-45cf-48dd-a6b4-b3af95b8e7e3রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি ৬০ শতাংশ না থাকায় প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ৯৫জন শিক্ষার্থী চুড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে পারছেন না। বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীর বেলায় শিক্ষকদের এমন কঠোর নীতি হলেও দুইজন ছাত্রীকে আইন ভেঙ্গে পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয়েছে।

 

তবে বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘৬০ শতাংশের অনেক নিচে ক্লাসে উপস্থিতি থাকার পরও দুইজন ছাত্রীকে প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয়েছে।তাদের একজনের ক্লাসে উপস্থিতি ছিল মাত্র ৩৭ শতাংশ। বিভিন্ন স্থান থেকে সুপারিশ আশার পরেই কেবল তাদের পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয়েছে। একে করে শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে দ্বৈতনীতি অবলম্বন করেছেন।’

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৭৫ শতাংশ ক্লাশে উপস্থিত থাকতে হয়। যদি বিশেষ কারণে তা সম্ভব না হলে, ৫০০ টাকা জরিমানা দিয়ে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রেও ৬০ শতাংশ উপস্থিতি থাকতে হয়।
বিভাগের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৫ জানুয়ারি ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রথমবর্ষের চুড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ শুরু হয়। ওই দিনই শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন ক্লাসে ৬০ শতাংশ উপস্থিতি না থাকার কারণে তাদের মধ্যে ৫১জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। পরীক্ষা না দিতে পারা শিক্ষার্থীদের তালিকায় অনেক অসুস্থ শিক্ষার্থীরও নাম ছিল। বিভিন্ন সময় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকার কারণে একাধিক শিক্ষার্থী বিভাগের ৬০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেননি।

 

এই মর্মে বিভাগে তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখিয়েও কোনো কাজ হয়নি। তবে ৫১জন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ৬০ শতাংশের নিচে উপস্থিতি থাকার অযুহাতে পরীক্ষায় বসার অনুমতি না দিলেও প্রথম বর্ষের ছাত্রী সাদিতুল মারজিয়া শাপলা ও নাবিলা হক শেফার বেলায় সেই বিধান মানা হয়নি। তাদের মধ্যে শেফার ছিল মাত্র ৩৭ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিতি। তবে তাদের জন্য রাষ্ট্রপতির দফতরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সুপারিশ আসার কারণে তাদের দুইজনকে পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয়।

 

Post MIddle

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের ১০১ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একইভাবে দ্বিতীয় বর্ষের চুড়ান্ত পরীক্ষায় ৬০ শতাংশের নিচে ক্লাসে উপস্থিত থাকার কারণে পরীক্ষায় বসতে পারছেন না ৪৪জন। আগামী ১৫ মার্চ তাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।পরীক্ষায় বসার দাবিতে গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত টানা অনশন করেও ওই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি মেলেনি।

 

প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘সাদিয়াতুল মারজিয়া শাপলার ‘এ্যাপেনডিস’ এর অপারেশন হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীস্মকালীন ছুটিতে। তাই তার ক্লাস করতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অপরপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চলার সময় ‘এ্যাপেনডিস’ এর অপারেশন করেছিলেন প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী রইসুল ইসলাম ওমর।অপারেশনের কারণে ওই শিক্ষার্থীর নিচ পেটে পুঁজ জমে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও তিনি ক্লাস করতে এসেছিলেন। পরে বিভাগের শিক্ষকরা তার ওই অবস্থা দেখে তাকে রেস্ট নিতে বলেছিলেন। কিন্তু ওই ছাত্রকেও এবার প্রথমবর্ষের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। একইভাবে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিব বিভাগের হয়ে খেলতে গিয়ে তার পায়ের ‘লিগামেন্ট’ ছিড়ে যায়, নুসরাত জাহান ইরিনার ‘লাঞ্চে’পানি জমে, সাব্বির আহমেদের ‘বাইপোলার ডিজঅর্ডার’ জনিত রোগ হওয়ায় ও মাশরুফা মেঘলার ‘এজমা’ সমস্যার কারণে তারা দীর্ঘদিন ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারায় ৬০ শতাংশ ক্লাস হয়নি। কিন্তু বিভাগেতারা রোগের বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিয়েও পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাননি।

 

এ বিষয়ে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক মো. ওয়ালিউল হাসানাত বলেন, ‘আমি এসব বিষয় জানিনা। ক্লাসে কোন শিক্ষার্থী কতো শতাংশ উপস্থিত ছিল তার গড় করে বিভাগে জমা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী সিদ্ধান্ত বিভাগের সভাপতি নিয়েছেন।’আইন বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ বলেন, ‘দুইজন শিক্ষার্থীর রোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ দেখার পরই তাদেরকে পরীক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল।’

 

রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে ফোন আসার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির দফতর ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন এসেছিল। প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন রোগের কাগজ দেখিয়েছিল এটাও ঠিক। তবে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি প্রথম বর্ষের দুইজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসতে দিয়েছে। অন্যদের ব্যাপারে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তাদেরকে পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয়নি।’

 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘আইন বিভাগের ৬০ শতাংশের নিচে কোনো শিক্ষার্থীর পরীক্ষা দেয়ার বিষয় নিয়ে বিভাগের কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেনি। আমি এসব বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানিনা। এটা সম্পূর্ণ বিভাগের বিষয়।’###

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট