ঢাবিতে বীরাঙ্গনার আত্মকথন গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান

8-2-2016‘বীরাঙ্গনার আত্মকথন’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান (৮ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রন্থটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো শিল্পী বেগম কর্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখক ও গ্রন্থ পরিচিতি তুলে ধরেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাওন্তী হায়দার। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুর রহমান ও ঢাবি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি রকীব উদ্দীন আহমেদ। সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন গ্রন্থকার অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম।

 

প্রকাশিত গ্রন্থটির মুখবন্ধ লিখেছেন এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এবং প্রাথমিক পর্যালোচনা করেছেন এমিরিটাস অধ্যাপক ড. এ এফ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এছাড়া, গ্রন্থটির উপর আলোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, জনাব মফিদুল হক এবং অধ্যাপক এম এম আকাশ।

 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনাদের স্মৃতিকথা লিপিবদ্ধ করে গ্রন্থাকারদ্বয় এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাঙালি জাতির ওপর বর্বর গণহত্যা চালায় এবং অসংখ্য নারীকে নির্যাতন করে। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা এখনও সেই নির্যাতনের চিহ্ন বহন করে চলেছেন।

 

Post MIddle

বাংলাদেশে গণহত্যা ও নির্যাতনের কথা অস্বাকার করায় কঠোর ভাষায় পাকিস্তানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একাত্তরের বাংলাদেশে গণহত্যা ও নির্যাতনের কথা পাকিস্তানের অস্বাকার করা এক বর্বরতারই নিদর্শন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে উপাচার্য বলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া স্বদম্ভে ৩০ লক্ষ বাঙালি হত্যাকাণ্ডের কথাই ঘোষণা করেছিল ১৯৭১’র ২২ ফেব্রæয়ারি। এ নিয়ে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করার অপচেষ্টার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এই স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের অসাধারণ অবদান নিয়ে কটাক্ষ হতে পারে, তা অকল্পনীয়। উপাচার্য তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে ও পড়তে আহ্বান জানান।

 

‘বীরাঙ্গনাদের আত্মকথন’ একটি অবশ্য পাঠ্যগ্রন্থ, তরুণদের তা পড়তে হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস আজও অজানা, অনালোচিত। ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মাহুতির পেছনে ৩০ লক্ষ ঘটনা রয়েছে। ৪ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির পেছনে রয়েছে ৪ লক্ষ মর্মান্তিক ঘটনা। আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে হবে। উপাচার্য বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা স্বরূপা বেগমের জীবনের চলমান অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরে বলেন, এ ধরনের অনেক মুক্তিযোদ্ধা হয়তো আমাদের অন্তরালে আত্মগোপনে আছেন। তারা যখন মর্যাদার সাথে আত্মপ্রকাশ করতে পারবেন তখনই আমাদের ¯^াধীনতা সার্থক হবে।

 

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্ব হারানো ২০ জন বীরাঙ্গনা নারীর নিজ বয়ানে তাঁদের জীবনকাহিনী এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাঁদের জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার বিষয়গুলো নিয়ে সম্পাদিত হয়েছে এই গ্রন্থটি।

 

লেখাপড়া২৪.কম/ঢাবি/পিআর/এমএএ

পছন্দের আরো পোস্ট