পিঠা আর বাউল গানে মাতোয়ারা গণ বিশ্ববিদ্যালয়

SAM_5966পিঠা বাংলাদেশের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে নগরায়নের প্রভাবে আজ তা অনেকটাই বিলুপ্তির পথে । হাজার বছর আগ থেকেই কৃষকের ঘরে হেমন্তের ফসল উঠলে তৈরি হত পিঠা। এই ধারাবাহিকতা চলতো শীতকাল পর্যন্ত। একসময় বাঙ্গালীর যে কোন উৎসব আনন্দে মিশে থাকতো রকমারি পিঠা। যান্ত্রিক জীবনে যা আজ অনেকটাই হারাতে বসেছে।

 

নগর সংস্কৃতির প্রভাবে হারিয়ে যাওয়া  পিঠা নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতে “সারাদিন পিঠা খান,সন্ধ্যায় হবে বাউল গান” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত গত ১৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার শীতকালীন গণ বিশ্ববিদ্যালয় পিঠা উৎসব ১৪২২ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক স্টল অংশগ্রহণ করে। গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৫০ রকমের পিঠা প্রদর্শিত ও বিক্রি হয়। উৎসবে উল্লেখ্য চিতই পিঠা,ভাঁপা পিঠা, চৈ পিঠা, পোয়া পিঠা, পাকন পিঠা,পাটিসাপটা পিঠা, গোলাপ পিঠা, নকশি পিঠা, ঘর কন্যা পিঠা, করি পিঠা, কুটুম পিঠা, মিষ্টি বড়া, লবঙ্গ পিঠা, খেঁজুর পিঠা,হাতকুলি পিঠা, ভিজা পিঠা , ঝিনুক, শঙ্খ রস, নকশি বিলাস, ডিম পিঠা সহ বিভিন্ন পিঠা স্থান পায় ।

 

গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ,সাংবাদিক সমিতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। শীতের সকালে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত পিঠার স্টলগুলো নানা সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে।পোস্টার, প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুনে ছেয়ে যায় ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আনন্দ ও উৎসাহে উৎসব স্থল কোলাহল মুখর হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পিঠা উৎসব চলে। শেষে মনোজ্ঞ বাউল গানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ক্যাম্পাসের আশেপাশের সাধারণ মানুষ এই উৎসব উপভোগ করেন।এসময় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, রেজিস্ট্রার মোঃ: দেলোয়ার হোসেন, ভৌত ও গাণিতিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. হাসিন অনুপমা আজহারী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুর্ত্তজা আলীসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও শিক্ষকগণ স্টলগুলো পরিদর্শন করেন।

 

Post MIddle

গণ বিশ্ববিদ্যালয় পিঠা উৎসব ১৪২২ নিয়ে ফার্মেসী বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী বাধন বলেন, “ছোটবেলা থেকে শহরে বড় হয়েছি । গ্রামে ওভাবে কখনও যাওয়া হয়নি আর পিঠাও খাওয়া হয়নি। বাংলাদেশের এক এক অঞ্চলের এক এক রকম পিঠা।  আর এই পিঠা উৎসবে সেই পিঠাগুলো এখানে এসেছে। সেই সুযোগে হরেক রকম পিঠা দেখাও হল আর খাওয়াও হল।” কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল্লাহ আল মুসাহেব  এসেছিলেন পিঠা উৎসবে। তিনি তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন এভাবে, “এমন একটি উৎসবে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে। চারপাশে এত পিঠা দেখে লোভ সামলে রাখতে পারছি না।  ভবিষ্যতে এমন উৎসব হলে আবার আমি চলে আসব পিঠা খেতে।”

 

গণ বিশ্ববিদ্যালয় পিঠা উৎসব ১৪২২ এর সমন্বয়ক শাহিনুর ইসলাম জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মত এই রকম একটি আয়োজন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত।আর এই উৎসবে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত আমাদের এই আয়োজনকে সফল করেছে।আর সহযোগিতার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ এবং আমরা ভবিষ্যতে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।” গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আতাউল মাহমুদ খান বলেন, “এই পিঠা উৎসবের কল্যাণে আমরা যারা ক্যাম্পাস জীবন শেষ  করে কর্মস্থলে আছি তাদের মধ্যে এক মিলন মেলার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা অনেকদিন পর আবারও ক্যাম্পাসে আসতে পেরেছি। আর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এইটাই আমার দেখা সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান।এই রকম অনুষ্ঠান হতে থাকলে যারা ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিয়েছে তারা আবার ক্যাম্পাসে আসতে পারবে যার ফলে ক্যাম্পাসের সিনিয়র এবং জুনিয়রদের সাথে এক মধুর সম্পর্ক তৈরি হবে।”

 

 

পিঠা শুধু খাবার না এর সাথে জড়িয়ে আছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। এই ধরনের উৎসব আর আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালী ঐতিহ্য , চেতনা আর সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি বাঙ্গালীর প্রাণে।

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট