‘জীবনের কথা,অর্থনীতির কথা’ নিয়ে রাবিতে গণ বক্তৃতা

RU Pic 23.01.2016 (1)রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরাম আয়োজিত ‘জীবনের কথা, অর্থনীতির কথা’ শীর্ষক গণ বক্তৃতা শনিবার (২৩জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, আমাদের সমাজের ভেতরের প্রাণশক্তি যদি নিঃশেষিত হয়ে থাকে তাহলে বাইরের পরিবর্তনই তার ইচ্ছামাফিক জায়গা করে নেবে। সকলের কল্যাণের চেতনা যদি সব কাজের মধ্যচিন্তা না হয়, তাহলে বাইরের পরিবর্তন ভেতরের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়াই করতে পারবে না। এর ফলে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা আমাদের সমাজের পারস্পরিক আত্মীয়তা ও সহমর্মিতার বন্ধন বরং আলগা হয়ে যাবে। সমাজ দিক হারাবে। তাল হারাবে। বিভ্রান্ত হবে। বিশৃংখলা দেখা দেবে। আর তখনই দেখা দেবে আমাদের সংস্কৃতির মূল সঙ্কট। বাইরের চাকচিক্য সত্ত্বেও দেখা দেবে এই অবক্ষয়। ভেতর থেকে ক্ষয়ে যাবার এই প্রবণতাকে বুঝতে হলে নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, অর্জন ও জীবনাচারের ওপর ভরসা রাখতে হবে। নতুন ও পুরানো মিলেই আমরা গড়তে চাই নয়া পৃথিবী। তা নাহলে বাইরের থেকে পরিবর্তনের যে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করবে তার নীট ফলাফল হবে সামাজিক বিকার। প্রান্তিকীকরণ। নিষ্ঠুরায়ন। নিঃস্বয়ন। বিমানবীকরণ।

 

গণ বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের অর্থনীতির গল্প এখন শুধু বাঙালির কাছেই নয়, সারা বিশ্বেই কৌতুহলের বিষয়। তারা জানতে চায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী এমন ঘটেছে যার ফলে বিশ্বমন্দার মধ্যেও দেশটি গত এক দশক ধরে গড়ে ছয় শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। জিডিপি’র ভিত্তিতে দেশটির স্থান এখন বিশ্বে ৪৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ‘গ্যালপ’ এর মতে পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদী জাতি এখন বাংলাদেশে এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিচারে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। বিশ্ব আজ জানতে চায়, সামাজিক উন্নয়নের কী এমন ঘটেছে এখানে-যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর। এ ক্ষেত্রে আমরা ভারত ও পাকিস্তানকে চার-পাঁচ বছর পেছনে ফেলে দিয়েছি। শিশু মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ এরই মধ্যে জাতিসংঘ পুরস্কার অর্জন করেছে। সেভ দ্যা চিলড্রেন-এর মাতৃসূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম। এ ক্ষেত্রেও ভারত (১৪০তম) এবং পাকিস্তান (১৪৯তম) বাংলাদেশের পেছনে।

 

Post MIddle

তিনি বলেন, গত বছর বাংলাদেশ ‘নিম্ন আয়ের দেশের’ গ্লানি ঘুচিয়েছে। লাভ করেছে ‘নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের’ মর্যাদা এখন এগিয়ে চলেছে পুরোপুরি মধ্য আয়ের দেশ হবার দৃঢ় প্রত্যয়ে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এ গৌরব অর্জনে সরকার বদ্ধপরিকর। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি বাংলাদেশ যেন অভাবনীয়ভাবে ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মত উঠে এসেছে সাবলিলতার আঙিনায়। এটিই আমাদের অর্থনীতির বড় গল্প।”

 

শনিবার সকাল ১০টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চত্বরে আয়োজিত এই গণ বক্তৃতায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান ও প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রফেসর হাসান আজিজুল হক। পাঠক ফোরামের সভাপতি নাসির উদ্দিন শুভর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আরিফ হাসনাত।#

 

 

লেখাপড়া২৪.কম/রাবি/পিআর/আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট