সহসাই খুলছে না ইবির আইন বিভাগের প্যাচ!

IUঅষ্টম বেতন কাঠামো সংশোধন ও কয়েকটি দাবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতির আন্দোলন প্রত্যাহার হওয়ায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বুধবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও চলেছে ক্লাস-পরীক্ষা। তবে বিভাগের শিক্ষকদের কর্মবিরতির ফলে অচল হয়ে পড়েছে আইন বিভাগ। দীর্ঘ দিন ক্যাম্পাস অচল থাকার পর সাভাবিক হওয়ার প্রথম দিনেই বিভাগটিতে কোন ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিভাগের চেয়ারম্যান ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিলেও অন্যান্য শিক্ষকরা ক্যাম্পাসেই আসেননি বলে জানা গেছে। ফলে বিভাগটির একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়ায় ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে।

 

জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগের একটি বোর্ডকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আইন বিভাগের শিক্ষকরা। বর্তমানে দেশে অবস্থানরত ১৬ জন শিক্ষকের ১৪ জন শিক্ষক বিভাগীয় চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ও নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন। আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি, চেয়ারম্যান আইন লংঘন করে বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্বেচ্ছাচারি কায়দায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এসব শিক্ষকদের অভিযোগ, বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শাহজাহান মন্ডল নিজের ইচ্ছামত বিভাগের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। সিনিয়র শিক্ষক বা বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকের মতামতের কোন মূল্যায়ন তিনি করছেন না বলেও শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। অন্যদিকে বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. শাহজাহান মন্ডল বলেন, ‘আইন মেনে ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কোন আপত্তি তোলেনি। এছাড়া বিভাগের যাবতীয় বিষয়ে সকল শিক্ষকের মতামত নেয়া হয় এবং মতামতগুলোর মূল্যায়ণ করা হয়।’ যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মিথ্যা বলে দাবি করেন বিভাগটির চেয়ারম্যান।

 

Post MIddle

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দীর্ঘ দিন ধরে পালিত কর্মবিরতির কর্মসূচী শেষ হলেও ক্লাসে ফেরেনি আইন বিভাগের শিক্ষকরা। আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে ক্লাস-পরীক্ষার ব্যাপারে কথা বললে তারা বলেন-‘নিয়োগ বোর্ড বাতিল ও চেয়ারম্যানের পদত্যাগের যে দাবি উঠেছে তা আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। কোন অনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রশ্রয় দিয়ে বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার পক্ষ্যে আমরা নই।’ আইন বিভাগের সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন আন্তরিক ভূমিকা রাখছেন না বলেও দাবি করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

 

এদিকে শিক্ষকদের অনঢ় অবস্থানে আইন বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা। প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা ক্লাসের আশায় ক্যাম্পাসে আসলেও ফিরতে হচ্ছে শূণহাতে। বিভাগের চেয়ারম্যান প্রতিদিন তার সিডিউল ক্লাস নিলেও অন্য শিক্ষকদের কোন ক্লাস অনুষ্ঠিহ হচ্ছে না। কোন বর্ষের ইনকোর্স বা চুড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ও বিভাগের শিক্ষকদের রুমে তালা ঝুলিয়ে দিয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছে না। এছাড়া ক্লাস-পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন করা না করা নিয়ে নিয়ে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ফলে দিনে দিনে আইন বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা হওয়া নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে বলেন- ‘বিভাগের শিক্ষকদের পারস্পরিক বিরোধের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা কেন ভুগবে? ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখে শিক্ষকরা কি তাদের দাবি আদায়ের জন্য কাজ করতে পারতেন না? শিক্ষকরা কেন টেবিলে বসে সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না? আমরা আশাকরি,বিভাগের সকল সমস্যা ও সংকট মোকাবেলায় শিক্ষকরা ঐক্যমতে পৌছবেন।’

 

এসব ব্যাপারে ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন-‘নিয়োগ বোর্ড বৈধ নাকি অবৈধ এটা আদালত নির্ধারণ করবে। যেহেতু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত চলে গেছে। কাজেই আদালতের দিকনির্দেশনা ছাড়া এব্যাপারে আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। আর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের জন্য নৈতিক পদস্খলন অথবা পরীক্ষায় অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ উত্থাপিত হলে সেটি করা যায়। কিন্তু আইন বিভাগের চেয়ারম্যানের ব্যাপারে এধরণের কোন অভিযোগ আমি পাইনি। কাজেই আমি মনেকরি, বিভাগের সকল শিক্ষককে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে একে অন্যের সহযোগী ও কল্যাণকামী হিসেবে কাজ করা উচিত।’

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট