পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত

lekhaporaবাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বিগত প্রায় আটমাস অব্যাহতভাবে অষ্টম জাতীয় বেতনকাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবনমনের প্রতিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য আন্দোলন করে আসছে। ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য যখন যে পদক্ষেপ অবলম্বনের প্রয়োজন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম সচল রেখে সে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষকরা বিভিন্ন পর্যায়ে স্বল্পতর পরিসরে কর্মবিরতি, মানববন্ধন ও স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করে সব মহলের যেমন দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তেমনি দাবি-দাওয়ার ন্যায্যতাও প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এবং বেতন-বৈষম্য দূরীকরণ-সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অষ্টম জাতীয় বেতনস্কেল ও প্রজ্ঞাপনে প্রতিফলিত না হওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দাবি পূরণ করা সম্ভব নয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এরূপ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ জানুয়ারি তারিখ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে আসছে।

 

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৭-০১-২০১৬ তারিখে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেশ করেছে। অতঃপর পেশাজীবীদের সম্মানে ১৮-০১-২০১৬ তারিখ বিকেলে আয়োজিত চা-চক্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। চা-চক্র শেষে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে তাঁর সাথে একটি আলোচনা সভায় মিলিত হয়- যা একঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী ছিল। চা-চক্র ও আলোচনা সভায় আমন্ত্রণ জানানোয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষক নেতৃবৃন্দের কথা ধৈর্য সহকারে শোনেন। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ অষ্টম জাতীয় বেতনস্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতনকাঠামোর অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা বহাল রেখে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে অধ্যাপকগণকে গ্রেড-৩ থেকে গ্রেড-১ এ উন্নীত করার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। অষ্টম জাতীয় বেতনস্কেলে সিনিয়র সচিবের যে স্থান রাখা হয়েছে, সেই স্থানে গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান রাখার দাবির বিষয়েও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। শিক্ষকদের মর্যাদার অবনমন হবে না মর্মেও তিনি প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।

 

Post MIddle

উক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষকগণ মনে করেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদেশের গণমানুষের নেতা এবং দেশের উন্নয়নের কান্ডারী- তাঁর নেতৃত্ব ও আশ্বাসের প্রতি রয়েছে শিক্ষকদের আগাধ আস্থা ও বিশ্বাস। সপ্তম বেতনকাঠামোতে যে সুযোগ-সুবিধা পেতেন অষ্টম জাতীয় বেতনকাঠামোতেও তার ব্যত্যয় হবে না এবং সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদায় গ্রেড-১ প্রাপ্ত শিক্ষকদের একটি অংশ উন্নীত হবেন বলে শিক্ষকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও আশ্বাসের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন চলমান কর্মবিরতি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দাবি-দাওয়ার অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখ ফেডারেশনের একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। ঐ সভায় দাবি-দাওয়ার অগ্রগতি পর্যবেক্ষন করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে দাবি-দাওয়া নিষ্পত্তি করার জন্য আমরা আহ্বান জানাই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ষড়যন্ত্রে শিক্ষকদের দাবিসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নে কোনোরূপ ব্যাঘাত ঘটবে না বলে শিক্ষকদের প্রত্যাশা। এর অন্যথা হলে শিক্ষক সমাজ তা কোনোভাবেই গ্রহন করবে না।

 

আমরা বিশ্বাস করি অষ্টম বেতনকাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিসমূহ আদায় হবে এবং তাঁদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও উন্নত মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্রটি অনতিবিলম্বে একটি মধ্য আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

 

লেখাপড়া২৪.কম/পিআর/এমএএ-০৬৯৩

পছন্দের আরো পোস্ট