আবীরের রঙে পরিসমাপ্তি ক্যাম্পাস জীবনের
জ্ঞান অর্জনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হল বিশ্ববিদ্যালয়। আর “আলোয় হৃদয় ভরি আমরা ১৫ কুঁড়ি” এই শ্লোগানে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনি উৎসবের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটল তাদের দীর্ঘ চার বছরের শিক্ষাজীবনের।
উৎসবের দিন সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের চারপাশে এক আবেগঘণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিদায়ী শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষা সমাপনি উৎসবের শুরু হয় আবির ছোটাছুটির মধ্য দিয়ে। আবীরের রঙে রঙিন হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। সবাই মেতে উঠে সেলফী উৎসবে ক্যাম্পাস জীবনের শেষ স্মৃতিটুকু ফ্রেমে বন্ধী করার জন্য। বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ও আবীরের রঙে রাঙিয়ে দেয় তারা। এরপর কেক কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এই সময় ক্যাম্পাসে একটি পলাশ ফুল গাছের চারা রোপণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মূর্তজা আলী বাবু। সাদা কাপড়ের উপর রং দিয়ে হাতের জলছাপের মাধ্যমে ব্যতিক্রমভাবে এক স্মৃতিফলকও তৈরি করে শিক্ষার্থীরা। আর তাদের সর্বশেষ কর্মসূচী ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি। সকল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এই র্যালিতে শেষ হয় উৎসবের।
আবেগে আপ্লুত হয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী পলাশ বলেন, “বুক ভরা স্বপ্ন আর চোখ ভরা সম্ভাবনা নিয়ে প্রাণ প্রিয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের উচ্চ শিক্ষার যাত্রা শুরু করেছিলাম। আজ তার শেষ প্রান্তে এসে আমরা তিলে তিলে টের পাচ্ছি বন্ধু হিসেবে আমরা সবাই পরস্পরের প্রতি কতটা আন্তরিক ছিলাম, কতটা গভীর ছিল আমাদের ভালবাসা। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলেও অটুট থাকবে আমাদের বন্ধুত্ব।”
সমাজবিজ্ঞানের বিকু মণ্ডল তার আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটান এইভাবে,“ক্যাম্পাসের বড় ছোট ভাইবোনদের সাথে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা রক্তের বন্ধনের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আর এই অবিচ্ছেদ্য বন্ধন কখনও ভোলবার নয়।”
কান্না বিজড়িত কণ্ঠে ফার্মেসীর মৌসুমি মিশু জানান, “হয়তো তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবার সাথে যোগাযোগ থাকবে কিন্তু একসাথে সেই আড্ডা, সেই গান, একটু দুস্তামি কিংবা অতি সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া আর হবেনা। সবাইকে খুব মিস করবো।”
রাজনীতি প্রশাসন বিভাগের শামিম হোসেন বলেন,“আর কখনও সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্যাম্পাসে আসা হবে না, এই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে এইটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।”
প্রিয় সহপাঠীদের সাথে ক্যাম্পাস জীবনের সর্বশেষ মিলন মেলা, তাই তো অনেকের চোখে মুখে ছিল কান্নার জল, বেদনার ছাপ। বাস্তবতার কঠিন নিয়মে সবাইকেই শিক্ষাজীবন শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে এই বিদায় চিরস্থায়ী বিদায় না, কেননা ক্যাম্পাসের সাথে ভালবাসার আর আবেগের এই যে সম্পর্ক তা কখন ছিন্ন হবার নয়। আর সর্বোপরি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের সকলের বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয় বহন করবে। এই সত্য অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
লেখাপড়া২৪.কম/গণবি/তারেক/আরএইচ-৪৭৫৮