গণবিতে নবীন আইনজীবীদের হাতেখড়ি

12065619_848928541881610_5130368124819339034_nআইন এমন একটি বিষয় যা জানতে এবং মানতে সকল নাগরিকই বাধ্য। কেনন না, কেউ কোন অপরাধের শাস্তি কি অথবা কোন কাজটি করা বেআইনি তা জানে না বলেই যে উক্ত অপরাধ বা বেআইনি কাজটি করে পার পেয়ে যাবে এমন কোন সুযোগ আইনে নেই। এই কথাটি অপরাপর বিষয় বা প্রতিষ্ঠানের মত কোর্ট প্রাঙ্গনেও সমান ভাবে প্রযোজ্য। তাই আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অধ্যয়ন কালে কোর্ট পরিদর্শন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার মাধ্যমে কোর্টের আইন ও পরিবেশ-পরিস্থিতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীগণ সম্যক ধারণা অর্জনে সক্ষম হয়ে উঠে। আইনজীবীর পেশাটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং। তাই এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাবহারিক শিক্ষার অংশ হিসেবে ছাত্র জীবনের বিভিন্ন সময়ে কোর্ট পরিদর্শন খুবই গুরুত্ব বহন করে। আরজি বা অভিযোগ গঠন থেকে শুরু করে মামলা বা মোকদ্দমার চূড়ান্ত রায় বা আদেশ পর্যন্ত অনেক গুলো ধাপ পেরোতে হয়। আর এর প্রতিটি ধাপেই রয়েছে কোন না কোন আইনজীবীর অক্লান্ত মেধা ও শ্রমের সমন্বয়। আইনজীবীগণ মেধা ও শ্রম দিয়ে যে সকল নথিপত্র প্রস্তুত ও সংগ্রহ করেন, সেগুলোর আলোকেই মামলা বা মোকদ্দমার রায় বা আদেশ গৃহীত হয়ে থাকে। তাই কিভাবে এই নথিপত্র প্রস্তুত, সংগ্রহ এবং তা আদালতে দাখিল করতে হয় এসকল  বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা পেতে হলে কোর্ট পরিদর্শন আবশ্যক।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের মনগড়া জীবন যাপন ছেড়ে আদালতের মত গুরুগম্ভীর পরিবেশে গিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই বিভিন্ন কারণে ভ্যাবাচেকায় পরতে হয়। আইনে অনার্স শেষ করার পর এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে দশ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোন সিনিয়রের সাথে নুন্যতম ছয় মাস শিক্ষানবিশ সময় অতিক্রম করতে হয়। সিনিয়রের আদেশ মোতাবেক যে যত ভালো ভাবে কাজ করতে পারে, পেশা জীবনে তার সফলতার সম্ভাবনাও থাকে ততবেশি। শিক্ষানবিশ সময়ে সিনিয়রের আদেশ শোনা মাত্রই যেন তা স্বল্প সময়ের মধ্যে সঠিক ভাবে পালন করা যায় এ জন্য প্রয়োজন আদালত সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন। যা কেবল মাত্র ছাত্র থাকাকালীন সময়েই আদালত পরিদর্শনের মাধ্যমে অর্জন করা ফলপ্রসূ হতে পারে। কেননা, ছাত্র জীবনে তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের চর্চা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অব্যাহত থাকে, তাই এই সময়ে ব্যাবহারিক জ্ঞান অর্জন করা হলে তা অতি সহজেই বোধগম্য হয়।

 

বিচারক কখন আদালতে বসেন, কিভাবে শুনানি গ্রহণ, সাক্ষ্য গ্রহণ ও জবানবন্দী গ্রহণ করেন এসব বিষয়ে ব্যাবহারিক জ্ঞান অর্জনে কোর্ট পরিদর্শনের বিকল্প নেই। ক্রমানুসারে আইনজীবীদের নিজ নিজ মক্কেলের পক্ষে নথিপত্র ও সাক্ষ্য প্রমাণ দাখিলের জন্য এজলাসে ডাকা হয়। এ ক্ষেত্রে কিভাবে কাজ করলে নিজের মামলাটির জন্য সঠিক সময়ে ডাক পরবে তা পূর্ব হতেই জেনে রাখা আইন বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একান্ত আবশ্যক। একজন আইনজীবী কর্তৃক আসামী বা ফরিয়াদিকে জেরা করা এবং সাক্ষ্য গ্রহণ করার নিয়ম ও কৌশলের শিক্ষা পেতে আদালত পরিদর্শন অতীব জরুরী। মামলা, মোকদ্দমার কাজে যে সকল স্ট্যাম্প ও কার্টিজ ব্যাবহার করা হয় সেগুলির মুল্য সম্পর্কে সম্যক ধারণার পাশাপাশি বিভিন্ন মামালা, মোকদ্দমার কোর্ট ফি’র প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে এই আদালত পরিদর্শনের মাধ্যমেই।

 

এছাড়াও মামলার প্রকৃতি ও এজলাস কক্ষের নাম্বার অনুসারে প্রতিটি এজলাস চেনা থাকলে শিক্ষানবিশগণ দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সিনিয়রদের কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা করতে পারে, সে বিবেচনায়ও আদালত পরিদর্শন খুবই কার্যকরী। পাশাপাশি একজন শিক্ষানবিশ হিসেবে সিনিয়রদের সাথে সম্পর্ক ও ব্যাবহার এবং  অপর শিক্ষানবিশদের সাথে সম্পর্ক ব্যাবহার কি রূপ হওয়া উচিৎ প্রভৃতি ধারণাও আদালত পরিদর্শন দ্বারাই অর্জিত হতে পারে।

 

Post MIddle

এরূপ অনেক আশা থেকেই ১৪ অক্টোবরের নাতিশীতোষ্ণ এক সকালে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগ ৫ম ব্যাচ ৪র্থ বর্ষের ৫০জন শিক্ষার্থী ঢাকা জেলা জজ আদালত ও দায়রা জজ আদালত পরিদর্শনে যাই। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ছিলেন আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ঢাকা জেলার প্রাক্তন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রফিকুল আলম। এই যাএায় আরও যুক্ত হয়েছিলেন বিভাগের শিক্ষক ফারাহ ইকবাল, হাসান মনঞ্জু।

 

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মুক্তা আক্তার জলি জানাজ, তিনি শিক্ষক জীবনে যতটা সৎ ও নিষ্ঠাবান চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, তা আমরা আদালত প্রাঙ্গনে প্রবেশ করেই বুঝতে পারি। তাঁর এই মহৎ ব্যক্তিত্ব আমাদের রীতিমত মুগ্ধ করে। সততা ও নিষ্ঠার প্রতি আমাদের ব্যাপক অনুপ্রেরণা যোগায়।

 

অন্যদিকে আরেকজন শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সোহান বলেন, আদালত ভবনগুলি যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি অপরিচ্ছন্ন তার চারপাশ। ভাঙ্গা কাঠগড়া, এজলাস ও বিচারকের সংকট সহ জনাকীর্ণ ঘিঞ্জি পরিবেশ আমাদের ভীষণ ভাবে বিচলিত করে। ২০১১ সালের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকার জেলা জজ ও সিজিএম পর্যায়ের আদালত রয়েছে ৮১টি। এর বিপরীতে এজলাস আছে মাত্র ৫৮টি। সারাদেশব্যপিই রয়েছে একই সংকট। আশা করি সরকারের সঠিক পদক্ষেপে অতি শীঘ্রই এই সংকটগুলি কাটিয়ে উঠতে পারবে।

 

সকল ভয়কে জয় করে, সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে, সম্ভাবনাময় স্বপ্ন এবং নাগরিক দায়বোধ থেকে বিচার বিভাগের বিভিন্ন পদে  সকল নবীন আইনজীবীদের  ভবিষ্যৎ যাত্রা শুভ ও সুন্দর হোক।

 

 

লেখাপড়া২৪.কম/গণবি/আসিফ/আরএইচ-৪৬১০ 

 

 

পছন্দের আরো পোস্ট