জ্ঞানের রাজ্য জাতীয় গ্রন্থাগার

জাতীয় গ্রন্থাগারবিশ্বের সাথে পরিচিত হবার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে বই পড়া। বই পড়ার মাধ্যমেই অতি সহজে জানা যায় বিভিন্ন জাতির জীবন দর্শন, তাদের ধ্যান-ধারণা, রীতিনীতি সবকিছু। বই পড়া মানুষকে করে তোলে আত্মসচেতন। আর এই বই পড়ার জন্য অনেক পাঠাগার বা লাইব্রেরী তৈরী হয়েছে, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বাংলাদেশের মানুষের অতি সুপরিচিত একটি গ্রন্থকেন্দ্র। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে।

 

অবস্থান: এটি হযরত গোলাপ শাহ মাজারের পূর্বে, রমনা মার্কেটের দক্ষিণে টিসিবি ভবনের পশ্চিমে অবস্থিত। জাতীয় গ্রন্থাগারটি সংস্কৃত মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে।

 

ভবন: জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনটি ৫ তলা বিশিষ্ট। এর ২য় তলায় একটি হলরুম ও অন্য পাশে বই ও অন্যান্য ম্যাগাজিন ও গবেষণা পত্র বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। এর তৃতীয় তলায় গবেষণা কেন্দ্র এবং প্রশাসন কেন্দ্র রয়েছে। আর চতুর্থ তলায় রয়েছে লাইব্রেরী।

 

জাতীয় গ্রন্থাগার২যেসব বই পাওয়া যায়: জাতীয় গ্রন্থাগারে প্রায় সব ধরনের বই রয়েছে। প্রশাসনিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৯,০০০ এর বেশি বই রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের বই যেমন ছোটদের থেকে শুরু করে বড়দের, বিজ্ঞান, ইতিহাস, আইন, সংস্কৃতি, উপন্যাস, ধর্মীয় ইত্যাদি বই পাওয়া যায়।

বিজ্ঞান বিষয়ক বই

মাটি ও মানুষের চাষাবাস – শাইখ সিরাজ, অ্যানিমেল ফার্ম – জর্জ অরওয়েল, মহাকাশে প্রাণের সন্ধান – ভবেশ রায়, মানুষ ও মহাবিশ্ব – শিশির কুমার ভট্টাচার্য, উচ্চতর সমাজ মনোবিজ্ঞান – ড: শওকত আরা।

 

ইতিহাস বিষয়ক বই: বাংলাদেশের আদিবাসীদের কথা – খুরশীদ আলম সাগর, হিস্ট্রি অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড – সাইফুল ইসলাম, একুশের দলিল – এম.আর আকতার মুকুল, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ – মুনতাসীর মামুন, ফল্ট লাইনস (স্টোরিস অফ ১৯৭১) – নিয়াজ জামান।

 

উপন্যাস বিষয়ক বই: যৌবনের কাল বেলা – মিনা ফারাহ, ঠিকানা ৭১ – সামসুল আলম সাইদ, নন্দিতা – উৎপল হাসান, পথে যা পেয়েছি – মো: আনিসুর রহমান, পদ্মা নদীর মাঝি – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

ধর্মীয় বই: বিশ্বনবী (স:) জীবন ও জীবনাদর্শ – আনু মাহমুদ, আদর্শ মানব – আলহাজ্জ মাওলানা ফজলুল করিম, আল-কুরআন ইজ অল সাইন্স – মুহাম্মদ আবু তালেব।

 

যেসব পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পাওয়া যায়: এখানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পাওয়া যায়। দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে – প্রথম আলো, জনকন্ঠ, যুগান্তর, কালের কন্ঠ, ইনকিলাব প্রভৃতি। ইংরেজী দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে – দ্যা ইনডিপেন্ডেন্ট, দ্যা ফিনান্সিয়াল এক্সপেয়ার, নিউ নেশন প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা পাওয়া যায়। এছাড়া কিছু পাক্ষিক, মাসিক, ষান্মাষিক, বিনোদনমূলক ও বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা ও ম্যাগাজিন এবং বিদেশী কিছু ম্যাগাজিন পাওয়া যায়। যেমন – টাইম, ইকোনোমিক, নিউ উইক ইত্যাদি ম্যাগাজিন পাওয়া যায়।

 

ক্যাটালগ সিস্টেম: জাতীয় গ্রন্থাগারে ক্যাটালগ সিস্টেম এখনো চালু হয় নাই। তবে ক্যাটালগ সিস্টেম চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করছে।

 

বইয়ের সেলফ: এই লাইব্রেরীতে মোট ২৫টি বইয়ের সেলফ রয়েছে।

 

Post MIddle

উন্মুক্ত: এটি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত। এখানে কোন বিধি-নিষেধ নেই।

 

সদস্যপদ লাভ: এই লাইব্রেরীতে সদস্যপদের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে সদস্য হওয়ার জন্য ১ বছরের জন্য ১০০ টাকা জমা দিতে হয়। পাঠককে ২টি কার্ড প্রদান করা হয়। এই কার্ড দিয়ে পাঠক প্রতিনিয়ত বই নেওয়া ও পড়ার কাজে ব্যবহার করতে পারে।

 

শিশুদের জন্য পড়ার ব্যবস্থা: শিশুদের পড়ার জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তবে শিশুরা অন্যান্য পাঠকদের সাথে বসে বই পড়তে পারে। এখানে ছোটদের জন্য আলাদাভাবে বিভিন্ন শিশুতোষ বই রাখা হয়েছে। যেমন – ঈশা খাঁ, রূপকথার গল্প ইত্যাদি।

 

বই বা ম্যাগাজিন বাসায় নেওয়া: শুধুমাত্র লাইব্রেরীর সদস্য পদ লাভ করেছে কেবল তারাই বাসায় বই নিতে পারে। এর জন্য আলাদা কোন টাকা দিতে হয় না। একজন সদস্য একটি বই সর্বোচ্চ ১৫ দিন বাসায় রাখতে পারে।

 

আজীবন সদস্যপদ: এখানে আজীবন সদস্যপদের কোন ব্যবস্থা নেই। প্রথমে সদস্য হয়ে পরে নবায়ন করে নিতে হয়।

 

চেয়ার-টেবিল: বসে পড়ার জন্য লাইব্রেরীতে প্রায় ৬০-৭০টি চেয়ার-টেবিল রয়েছে।

 

সময়সূচী: এটি সরকার অনুমোদিত লাইব্রেরী তাই সরকারি হিসাব অনুযায়ী খোলা-বন্ধের সময়সূচী পালন করে থাকে।

 

ক্ষতিপূরন: লাইব্রেরী থেকে কোন বই নেওয়ার পর যদি হারিয়ে যায় তবে জরিমানা হিসেবে হারিয়ে ফেলা বইয়ের অন্য আরেকটি কপি কিনে দিতে হয় অথবা ১০% টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।

 

টয়লেট সংখ্যা ও অবস্থান: এই লাইব্রেরীতে ২টি টয়লেট রয়েছে। এগুলো লাইব্রেরীর উত্তর ও পশ্চিম কোণে অবস্থিত। দুটি টয়লটের মধ্যে ১টি পুরুষদের অপরটি মহিলাদের জন্য।

 

ফায়ার এক্সিট ও অগ্নি নির্বাপন: এখানে ফায়ার এক্সিট ও অগ্নি নির্বাপন এর সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরে ৩টি করে ফায়ার এক্সিট রয়েছে। অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

গাড়ি পার্কিং: লাইব্রেরীর সদস্যদের জন্য আলাদা করে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা নেই। তবে প্রশাসনের লোকদের জন্য নিচতলায় দুইটি গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা রয়েছে।

 

শীতাতপ ব্যবস্থা: এই লাইব্রেরীতে শীতাতপ ব্যবস্থা নেই। তবে এটিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার জন্য উচ্চমহলের সাথে আলাপ আলোচনা করা হয়েছে এবং দ্রুত এটি বাস্তবায়ন করা হবে।# (সূত্র-অনলাইন ঢাকা ডটকম)

 

 

লেখাপড়া২৪.কম/আরএইচ-৪৫৮২

পছন্দের আরো পোস্ট