ফেয়ারট্রেড ইউনিভার্সিটি সারব্রুকেন
ফেয়ারট্রেড’ বা ন্যায্য বাণিজ্যের ব্যাপারে জার্মানির সারব্রুকেন ইউনিভার্সিটি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে৷ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ক্যান্টিনে পাওয়া যাচ্ছে ‘ফেয়ারট্রেড কফি’৷ আর সেমিনারে আলোচনা করা হচ্ছে ন্যায্য বাণিজ্য নিয়ে৷
সারব্রুকেন বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নশীল দেশের ক্ষুদ্র চাষিদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে৷ এ কারণে ‘ফেয়ারট্রেড ইউনিভার্সিটি’ হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷
আইভরি কোস্ট থেকে আসা ডিসায়ার বালো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি ‘ফেয়ারট্রেড চকলেটের স্ট্যান্ড’ সাজিয়েছেন৷ বালোর পরিবার দুই প্রজন্ম ধরে কোকো বাগানে কাজ করছেন৷ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২৫০টি চকলেটের বার রয়েছে তাঁর স্ট্যান্ডে৷ মাঝে মাঝে অবশ্য তাঁকে লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে সূর্যের তাপ যেন সেগুলিকে গলিয়ে না দেয়৷
প্রায়ই তিনি সারব্রুকেন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে তাঁর পসরা সাজিয়ে বসেন৷ বছর দশেক আগে, ছাত্র থাকাকালীনই বালো শুরু করেন উদ্যোগটি৷ তবে এখন কাজ করছেন অবৈতনিকভাবে৷
বালো বলেন, ‘‘আমি এখানে মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আসি এখানে৷ আফ্রিকার ক্ষুদ্রচাষিদের অবস্থা বর্ণনা করে সে সম্পর্কে মানুষের মনে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে চাই৷”
ক্ষুদ্রচাষিদের বিশেষ উদ্যোগ
কাগিল ও নেসলে-র মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য চাষিরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন আইভরি কোস্টে৷ আশেপাশের ক্ষুদ্র চাষিরা একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছেন ‘ফেয়ারট্রেড গ্রুপ’৷ তাঁদের পণ্য উত্তরের ধনী দেশগুলিতে স্থিতিশীল ও ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করেন তাঁরা৷ এ জন্য পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেন চাষিরা৷ ফলে আইভরি কোস্টে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে, বলেন ডিসায়ার বালো৷ যেমন নির্মাণ করা হয়েছে হাসপাতাল ও স্কুল৷বালো এখন জার্মানিতে ন্যায্য বাণিজ্যকে শক্তিশালী করতে চান৷ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই সব পণ্যকে পরিচিত করাতে চান৷
দশ বছর ধরে প্রকল্পটি চলছে
অবশ্য তিনি একা নন, দশ বছর ধরে সারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটিতে ‘আক্সিয়নব্যুন্ডনিস ফেয়ার উনি সার’ প্রকল্পটি চলছে৷ সারব্রুকেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সবখানেই ন্যায্য মূল্যের পণ্য বিক্রি হয়৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রজেক্টের মাধ্যমে ‘ফেয়ারট্রেড’-এর ব্যাপারে তথ্য জানানো হয়৷ এ ব্যাপারে বিশেষ তত্পরতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে৷ এটা জার্মানির প্রথম ইউনিভার্সিটি, যেটি ‘ফেয়ার ট্রেড ইউনিভার্সিটি’ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে৷
জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচারণা চালানোর ফলে সংগঠনটি আরো অনুকরণকারী পাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ আইডিয়াটা এসেছে ব্রিটেন থেকে৷ সেখানে ৭০টিরও বেশি ‘ফেয়ারট্রেড ইউনিভার্সিটি’ রয়েছে৷ সামাজিক দায়িত্ববোধের ব্যাপারে এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদর্শ হতে পারে৷ বলেন ‘ট্রান্সফেয়ার’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডিটার ওভারাথ৷
‘‘নিখুঁত ফেয়ারট্রেড ইউনিভার্সিটি বলতে আমি বুঝি, যেখানে সব ফ্যাকাল্টির ক্লাসগুলিতে ফেয়ারট্রেড ও বিশ্বায়ন সম্পর্কে আলোচনা হয়”, বলেন ওভারাথ৷এক্ষেত্রে সারব্রুকেনকে আরো দৃশ্যমান হতে হবে – কিছুটা সমালোচনার সুরেই বলেন তিনি৷
কম মূল্যের পণ্যের দিকেই হাত
অন্যান্য জার্মান ইউনিভার্সিটির মতো সারব্রুকেন ইউনিভার্সিটিতেও শিক্ষার্থীরা ‘ফেয়ারট্রেড’-এর চেয়ে ৩০ সেন্ট কম দামের সাধারণ চকলেটের দিকেই হাত বাড়ায়৷ অবশ্য অন্যদিকে ক্যান্টিন বা মেনসায় বছরে ৩০ থেকে ৪০ টন ন্যায্য বাণিজ্যে কেনা চাল রান্না করা হয়৷ কফি মেশিনে বানানো হয় ‘ফেয়ারট্রেড কফি’, এমনকি কলাও আসে ‘ফেয়ারট্রেড’ বাগান থেকে৷ খাদ্যদ্রব্য অর্ডার দেওয়ার ক্ষেত্রে এই দিকটায় বিশেষ লক্ষ্য রাখেন কিচেন প্রধান টোমাস হাব৷
এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও কর্মীদের কাছে নিখরচায়‘ফেয়ারট্রেড’ পণ্যের ডেলিভারি সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে৷ ‘‘আমাদের কাছে ন্যায্য বাণিজ্য থেকে আসা পণ্যের একটি তালিকা রয়েছে৷ এ থেকে কিছু কিনতে চাইলে আগ্রহীরা অতি সহজেই ই-মেলের মাধ্যমে আমাদের কাছে জানাতে পারেন৷ আমরা সেই জিনিসগুলির অর্ডার দিয়ে থাকি৷” মাদাগাস্কার থেকে আসা ছাত্রী নিরিনা আন্দ্রিয়ামাহাজো-র কথা ৷
‘‘চাহিদাটা অবশ্য এখনও উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো নয়৷ সপ্তাহে গড়ে পাঁচ প্যাকেট কফি আগ্রহীদের কাছে পৌঁছে দেই আমরা”, জানান নিরিনা৷ তবে মানুষের আগ্রহটা যাতে বৃদ্ধি পায়, সে ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি৷ বছর তিনেক আগে ‘ইয়াং ফেয়ারট্রেড অ্যামব্যাসাডর’ হিসাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন নিরিনা৷
ন্যায্যবাণিজ্য সংক্রান্ত প্রচারণা
এই বার্তাবাহকরা শুধু ন্যায্য-পণ্যের স্ট্যান্ড নিয়েই ব্যস্ত থাকেন না, ক্যাম্পাসে এ সংক্রান্ত নানা ধরনের অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে থাকেন৷ বিলি করেন প্রচারপত্র৷ ‘‘ন্যায্য বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হওয়াটা আমার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ কেননা আমি জানি দক্ষিণের দেশগুলিতে ক্ষুদ্র চাষিদের জীবনটা কেমন৷” জোর দিয়ে বলেন নিরিনা৷ মাদাকাস্কার একটি দরিদ্র দেশ, যেখানে ছেলে-মেয়েদের কৃষিখেতে মা-বাবাকে সাহায্য করতে হয়৷ সম্ভব হয় না স্কুলে যাওয়া৷
এ সমস্যাটা ডিসায়ার বালো-র দেশেও রয়েছে৷ সেখানেও পরিবারের সবাইকে কাজ করতে হয় ক্ষেতে৷ নগণ্য দামে বড় বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে হয় ফসল৷ ‘‘ইউরোপ যদি ন্যায্য বাণিজ্যের পণ্যের ব্যাপারে আরো উত্সাহ দেখাতো, তা হলে বিশাল প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের আচরণ পরিবর্তনের ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করতো৷” আশা করেন বালো৷
‘ফেয়ারট্রেড’ পদ্ধতির মাধ্যমে এ পর্যন্ত ল্যাটিন অ্যামেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার ১.২ মিলিয়ন মানুষকে সাহায্য করা হয়েছে৷
ডি ডব্লিউ থেকে সংগ্রহ: লেখাপড়া২৪.কম/ফরেন/স্বশা-১২৪০