৩২কোটি ৫০লাখ বিনামূল্যের বই ছাপা হচ্ছে

book

উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ দরপত্রের মাধ্যমে বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের কাগজ কেনায় এবার প্রতি মেট্রিক টনে প্রায় ৫ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে সরকারের। এতে মাধ্যমিক স্তরের বই মুদ্রণের জন্য এবার মোট ১৯ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন কাগজ ক্রয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। তবে চড়া দামে কাগজ ক্রয়ে এনসিটিবিকে বাধ্য করতে ব্যর্থ হয় ক্ষুব্ধ অসাধু সিন্ডিকেট।

 

 

তারা অনৈতিক কমিশন থেকে বঞ্চিত হয়ে এখন বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে নানাভাবে তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ। যদিও মুদ্রণ শিল্প সমিতি বলছে, এনসিটিবিই সিন্ডিকেট করে নিম্নমানের কাগজ কিনছে।

 

 

 

এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল কাশেম মিঞা বলেন, ‘দেশে বর্তমানে কাগজের মিল আছে ৬০টি। সবাই দরপত্রে অংশ নিয়েছে। কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাগজ সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছে ৯টি প্রতিষ্ঠান।

 

এতে যারা কার্যাদেশ পায়নি তাদের ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। আগামীতে কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হয়তো বাড়বে। এতে প্রতিযোগিতা যেমন বাড়বে, তেমনি কাগজ ক্রয়ে আমাদের আরও সুবিধা হবে।’

 

 

 

কাগজ সরবরাহের কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে শর্তানুযায়ী মানসম্মত কাগজ উৎপাদন ও সরবরাহে বাধ্য করতে তিনটি শক্তিশালী মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে এনসিটিবি। এসব কমিটিতে আছে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুজন করে প্রতিনিধি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের দুজন প্রতিনিধি, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রতিনিধি এবং এনসিটিবির দুজন করে প্রতিনিধি আছে। পাশাপাশি এ কার্যক্রম তদারকি করতে দুটি পরিদর্শন সংস্থাকে নিয়োজিত করা হয়েছে।

 

 

 

প্রফেসর আবুল কাশেম মিঞা বলেন, ‘কাগজ সরবরাহের কার্যক্রম আমরা নিবিড়ভাবে মনিটরিং করছি। এখন পর্যন্ত নিম্নমানের কাগজ সরবরাহের কোন তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।’ তিনি জানান, ‘মনিটরিং কমিটিগুলো কাগজের মান, বই মুদ্রণ ও বাঁধাই এবং সরবরাহ কার্যক্রম তদারকি করছে।’

 

 

 

 

সরকার প্রাথমিক ও মাদ্রাসার ইবতেদায়ির বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ করে আন্তর্জাতিক দরপত্রে। এতে দরদাতা প্রতিষ্ঠানই দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কাগজ কিনে বই মুদ্রণ করে জেলা পর্যায়ে সরবরাহ করে থাকে। আর মাধ্যমিক স্তরের ছাপা হয় স্থানীয় দরপত্রে। এক্ষেত্রে এনসিটিবি নিজস্ব উদ্যোগে কাগজ কিনে দরপত্রের মাধ্যমে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করে। এতে খরচ যেমন বেশি পড়ে, তেমনি এনসিটিবিকে ঝামেলাও পোহাতে হয় অনেক বেশি। তাই সরকার পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক দরপত্রে বই ছাপার পরিধি বাড়াচ্ছে।

 

 

 

Post MIddle

এদিকে মুদ্রণ শিল্প সমিতির পক্ষে গত ২৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা হয়, ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

 

 

এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক আফম শাহ আলম বলেন, ‘এই সেক্টরকে বাঁচানোর জন্য আমরা বইয়ে মানসম্মত কাগজ ব্যবহারের কথা বলছি। এই সেক্টরে প্রায় ৭ হাজার প্রিন্টার্স জড়িত। তাদের বাঁচাতে হবে। নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার ফলে বহির্বিশ্বে আমাদের সুনাম হানি হচ্ছে।’কাগজ ক্রয়ে অনৈতিক কমিশন এবং কার্যাদেশ না পেয়ে সমিতি ঢালাও অভিযোগ করছে_ এনসিটিবির এমন বক্তব্যের বিষয়ে শাহ আলম বলেন, ‘এসব বলে এনসিটিবি পার পাবে না। আমরা আগামী ১২ আগস্ট এনসিটিবির সামনে অনশন করব। এর আগে আগামী ৯ আগস্ট আমাদের সমিতির এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) হবে। সেখানেও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এনসিটিবিকে পাঁচজনের সিন্ডিকেট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

 

 

 

প্রাথমিক স্তরের বই ছাপা হয় ৮০ গ্রামের হোয়াইট প্রিন্ট কাগজে এবং মাধ্যমিক স্তরের বই মুদ্রণ হয় ৬০ গ্রামের হোয়াইট প্রিন্ট কাগজে। তবে কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কাগজের গ্রাম সর্বোচ্চ তিন ভাগ কম-বেশি বা এদিক-সেদিক করতে পারে।

 

 

 

 

এনসিটিবি জানায়, ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট পাঠ্যবই মুদ্রণ হবে প্রায় ৩২ কোটি ৫০ লাখ কপি। এরমধ্যে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ির সব বই ছাপা হচ্ছে আন্তর্জাতিক দরপত্রে। এবার মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপতে এনসিটিবিকে কাগজ কিনতে হচ্ছে ১৯ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। এতে মোট ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৪০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গড়ে প্রতি মেট্রিক টন কাগজের দাম পড়ছে ৭২ হাজার ২২৬ টাকা।

 

 

 

অন্যদিকে সংস্থাটি গত বছর মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপতে কাগজ কিনেছিল ১৬ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। ওই বছর প্রতি মেট্রিক টন কাগজের দাম পড়েছিল প্রায় ৭৭ হাজার টাকা।

 

 

 

এবার যারা কাগজ সরবরাহ করছে:

এনসিটিবি জানায়, ১৯ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন কাগজ সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছে ৯টি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে বসুন্ধরা পেপার মিল ১ হাজার মেট্রিক টন, গাজীপুর পেপার মিল ৬ হাজার মেট্রিক টন, ইউনূস নিউজপ্রিন্ট লিমিটেড ১ হাজার মেট্রিক টন, আজমী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ৩ হাজার মেট্রিক টন, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস লিমিটেড ১ হাজার মেট্রিক টন, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড ২ হাজার মেট্রিক টন, ক্যাপিটাল বোর্ড মিলস লিমিটেড ২ হাজার মেট্রিক টন, আল নূর পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড ১ হাজার মেট্রিক টন এবং পাল্প পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড ২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন কাগজ সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছে।

 

EH

পছন্দের আরো পোস্ট