পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রাজশাহী পলিটেকনিকের ছাত্রাবাস
এক ছাত্র খুন হওয়ার পর নৈরাজ্যের ভয়ে প্রায় পৌনে পাঁচ বছর ধরে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিনটি ছাত্রাবাসই বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অযত্ন-অবহেলায় ছাত্রাবাসের অনেক জিনিসপত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি, প্রশাসনিক দুর্বলতার জন্যই কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাস খুলে দিচ্ছে না।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি ছাত্রমৈত্রীর পলিটেকনিক শাখার সহসভাপতি রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরীকে কুপিয়ে জখম করা হয়।
ওই দিন বিকেলেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হামলায় ছাত্রমৈত্রীর আরও কয়েকজন নেতাও গুরুতর আহত হন। ওই দিনই কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দেয়। এর চার মাস ১৯ দিন পর ২০১০ সালের ২৬ মে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হলেও ছাত্রাবাস খুলে দেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট লোকজন জানান, একটি হত্যাকাণ্ডের পর আবারও পাল্টা হত্যার ঘটনা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে—এ আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাস খুলে দিতে পারেনি। এই ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে তিনটি ছাত্রাবাস রয়েছে। এগুলো হলো শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ (র.) ছাত্রাবাস, শহীদ মনোয়ার ছাত্রাবাস ও আক্তারুন্নেসা ছাত্রীনিবাস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই তিন ছাত্রাবাসের যাতায়াতের রাস্তাগুলোতে জঙ্গলের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রাবাসের বারান্দার গ্রিল বেয়ে উঠেছে লতাপাতা। গেটের তালায় মরিচা ধরে গেছে।
প্রতিষ্ঠানের সপ্তম পর্বের শিক্ষার্থী সুমন ইসলাম জানান, মেসে একটি ছোট্ট কক্ষে কয়েকজনকে এক হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। ক্যাম্পাসের ছাত্রাবাসও খুলে দেওয়া হচ্ছে না। বাইরে থাকার খরচও বেশি।
তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী নাজমুল হক জানান, ক্যাম্পাসে থাকতে পারলে অনেক বিষয়ের বই-ই কিনতে হতো না। সহপাঠী ও বড় ভাইদের সহযোগিতা নিয়ে ও পাঠাগারে পড়াশোনা করলেই হতো। কিন্তু মেসে এসব সুযোগ-সুবিধা নেই। বাইরে খরচ বেশি, কষ্টও বেশি।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুজ্জামান জানান, তারা বহুবার পলিটেকনিকের অধ্যক্ষকে ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। এমনকি ছাত্রীদের বাইরে থাকার সমস্যার কথা ভেবে তারা শুধু ছাত্রীনিবাসটি খুলে দেওয়ার জন্য বললেও কর্তৃপক্ষ তা শুনছে না। তিনি এও বলেছেন, মেধা অনুযায়ী যারা ছাত্রাবাসে আসন পাবেন, তারা দাঁড়িয়ে থেকে তাদের তুলে দিয়ে সহযোগিতা করবেন। এর পরও ছাত্রাবাস খোলা হচ্ছে না। এখন কোনো রাজনৈতিক সংকট নেই। তাই ছাত্রাবাস খুলে না দেওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দুর্বলতা।
ছাত্রমৈত্রীর মহানগর শাখার সভাপতি মতিউর রহমান জানান, তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না। প্রশাসনকে তাঁরা সব রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এর পরও শুধু প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাস খুলে দিতে পারছে না।
ইনস্টিটিউটের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে গত ২২ জুলাই দায়িত্ব নিয়েছেন মীর মোশাররফ হোসেন। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ১০ জুলাই পর্যন্ত অধ্যক্ষ ছিলেন আবদুল জলিল। তিনি জানান, ছাত্রাবাসগুলো দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে বৈদ্যুতিক লাইনসহ অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো ঠিক করতেও অনেক টাকা লাগবে। এগুলো দেখার জন্য তিনি একটি কমিটি করে দিয়েছেন। এই কমিটির প্রতিবেদন পেলে দেখা যাবে, মেরামত করতে কত টাকা লাগবে। সেটা দেওয়া যাবে কি না। আবার ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার পর রাজনৈতিক সংকটটা বোঝা যাবে, দখল-বেদখলের ঘটনা ঘটছে কি না।
EH