বেদখল হয়ে যাচ্ছে রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছর পর বেদখল হতে চলেছে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্প্রতি আদালতের ডিক্রি নিয়ে আবদুল কাদের নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বিদ্যালয়ের পুরো জমির মালিকানা নিজের বলে দাবি করছেন। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, কাগজপত্র জাল করে জমি দাবি করছেন ওই ব্যক্তি।
জমির মালিক দাবিদার আবদুল কাদের জানান, তার বাবা আবদুল জব্বার আশির দশকে মারা গেছেন। তিনিই করিমন নেছা গংয়ের কাছ থেকে ওই জমি পত্তন নিয়েছিলেন। এসএ খতিয়ান তার বাবার নামে হয়েছে। তবে আরএস খতিয়ানটি ভুলবশত রাজশাহী পৌরসভার নামে হয়েছে।
আদালতে মামলা করে তিনি পাঁচটি ডিক্রি পেয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতও তার পক্ষেই রায় দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জমশেদ আলী বলেন, ১৯৬৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়। সিএস খতিয়ানে এই জমির মালিক হচ্ছেন করিমন নেছা বিবি, আরিমন নেছা বিবি এবং মতি বেওয়া। এসএ খতিয়ান ও আরএস খতিয়ানে জমির মালিক তৎকালীন রাজশাহী পৌরসভা।
জমশেদ আলী আরও জানান, স্থানীয় ভ‚মিহীন জব্বারকে প্রথমে বিদ্যালয়ের মাঠের এক পাশে অস্থায়ী ঘর করতে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জব্বারের মৃত্যুর পর ১৯৯৫ সালে তার ছেলে আবদুল কাদের বিদ্যালয়ের জমিটির মালিকানা দাবি করেন। এ নিয়ে ওই বছরের ২২ জুলাই একটি সালিশ হয়। সালিশে কাদের বিদ্যালয়ের সীমানার ভেতরে জমির মালিকানা দাবি করবেন না বলে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন। এছাড়া, কাদের স্কুলের ভুয়া সভাপতি সাজিয়ে একতরফা ডিক্রি নিয়েছেন বলেও দাবি তার।
২ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের আঙিনার ভেতরে জনস্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ওয়াস ব্লক ভবন নির্মাণ করতে গেলে আবদুল কাদের বাধা দেন। পরে এ নিয়ে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ও নির্মাণ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেন।

লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নূর মোহাম্মাদ জানান, ‘কাদেরের বাবা কখনও এই জমির মালিকানা দাবি করেননি।
স্থানীয় প্রবীণ নসিম উদ্দিন জানান, তারা এই বিদ্যালয়টি যখন নির্মাণ করেন তখন জায়গাটা নিচু ছিল। তারাই ভরাট করেছেন। কাদেরের বাবার বাড়ি করার জায়গা ছিল না। তাই মাথা গোঁজার জন্য অল্প একটু জায়গায় তাকে থাকতে দেয়া হয়। এখন জাল কাগজ তৈরি করে আদালতে মামলা করেছেন কাদের।
একটি সূত্র জানায়, স্কুল কমিটির কিছু প্রভাবশালী সদস্যকে ম্যানেজ করে আবদুল কাদের জাল কাগজ তৈরি করেছেন। মামলা দায়েরের পরও খোদ সভাপতিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। ফলে একতরফাভাবে কাদেরের পক্ষে ডিক্রি চলে গেছে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা নাসিমা বেগম জানান, যে এসএ খতিয়ানের মূলে আবদুল কাদের বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা দাবি করছেন, বিদ্যালয়ের ফাইলে সেই খতিয়ানও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে সরকারি দফতরে আবেদন করে সম্প্রতি তা পাওয়া গেছে।
বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকেও জানানো হয়েছে। তারাই এ বিষয়ে আইনি লড়াই চালাবে।
এ বিষয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তী জানান, আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবেলার জন্য কয়েকদিন আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে একটি চিঠি এসেছে। ওই চিঠিতে স্কুলের এই জটিলতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে অধিদফতরে শিগগিরই একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
EH