ব্রিটেনে বর্ণ বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটিগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে বর্ণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুতসহ এথনিক মাইনোরিটি স্টুডেন্টরা। সমান যোগ্যতা সম্পন্ন ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ স্টুডেন্টরা এক্ষেত্রে এথনিক মাইনোরিটি স্টুডেন্টদের তুলনায় ভর্তি সুযোগ বেশি পাচ্ছে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সাইন্স এর এক গবেষণা রিপোর্টে সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশিত হয়।
২০০৮ সালের ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তির আবেদনপত্র গবেষণা করে তৈরি এই রিপোর্ট গত সপ্তাহে প্র্রকাশ করে এলএসই। এ লেভেল পরীক্ষায় কমপক্ষে ২টি ‘এ’ প্রাপ্ত ২১ বছরের নিচের স্টুডেন্টদের ছিল এই আবেদনগুলো।
রিপোর্টে ১২টি এথনিক মাইনোরিটি গ্রুপের স্টুডেন্টদের আবেদনপত্র গবেষণা করে দেখা যায়, যোগ্যতা থাকা সত্বেও ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ ও মিক্স শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় ভর্তির সুযোগ কম পায় এই গ্রুপগুলোর স্টুডেন্টরা। একাডেমিক এচিভমেন্ট, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও উচ্চমানের স্কুলে অধ্যায়নের পরও ভালো ইউনিভার্সিটিগুলোতে ভর্তির সুযোগ কম পাচ্ছেন বাংলাদেশিসহ এথনিক কমিউনিটির স্টুডেন্টরা।
রিপোর্টে বলা হয়, ইউনিভার্সিটি ভর্তিতে ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ স্টুডেন্টদের শতকরা ৭১ ভাগ আবেদন যেখানে সফল হচ্ছে, সেখানে সমান যোগ্যতা থাকা সত্বেও বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের আবেদন সফল হচ্ছে ৪৯ ভাগ। আর পাকিস্তানী স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে এই হিসেব ৫২ ভাগ। এতকিছুর পরও বাংলাদেশিসহ এথনিক কমিউনিটির স্টুডেন্টরা ভালো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির চেষ্টা করেই যাচ্ছেন।
এদিকে, গবেষণার দীর্ঘ ৬ বছর পর প্রকাশিত এলএসই’র এই গবেষণা রিপোর্ট ব্রিটেনের উচ্চমানের ইউনিভার্সিটিগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটিগুলোর মুখপাত্র সংগঠন ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটি’জ ইউকে বর্ণ বৈষম্যের এই অভিযোগের প্রতি ইউনিভার্সিটিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষন করেছে।
সংগঠনটি বলছে, বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটির স্টুডেন্টরা এ লেভেলে ভালো ফলাফল ও মার্ক নিয়েই ইউনিভার্সিটিতে যায়, এমন মন্তব্য করে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস এর এসোসিয়েটস প্রফেসর ড. মাইক্যাল শিনার বলেন, এলএসই’র গবেষণা রিপোর্টটি ইউনিভার্সিটিগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে আমাদের মধ্যে নতুন ভাবনার জন্ম দিয়েছে।
গত রোববার বিবিসি লন্ডন রেডিওতে এ বিষয়ে প্রচারিত এক লাইভ টকশোতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত এলএসই গমনেচ্ছুক স্টুডেন্ট সৈয়দ মাহাথির পাশা ভর্তির আবেদনপত্র থেকে এথনিক পরিচিতি বক্সটি তুলে ফেলার আহবান জানিয়েছে ইউনিভার্সিটিগুলোর প্রতি। মাহাথিরের মতে এথনিক পরিচিতি জানতে না পারলে এই বৈষম্য কমে আসবে।
ভর্তির ক্ষেত্রে বর্ণ বৈষম্যে হতাশা ব্যক্ত বিবিসি লন্ডন রেডিওর লাইভ টকশোতে মাহাথির বলে, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো লিবারেল ডেমোক্রেসির দেশ ব্রিটেনে এটি কোনভাবেই কাম্য হতে পারেনা।
তবে এই বর্ণ বৈষম্য আগের তুলনায় অনেক কমেছে বলেই মাহাথিরের ধারণা।
বিবিসি লন্ডন রেডিওতে তার মন্তব্য, ‘আমাদের আগের প্রজন্ম এই বৈষম্য আরও বেশি মোকাবেলা করেছেন’। এমন একটি রিপোর্টের পর ভালো ইউনিভার্সিটিগুলোতে ভর্তি চেষ্টার হাল না ছেড়ে এথনিক কমিউনিটি স্টুডেন্টদের এই চেষ্টা আরও জোড়দার করার আহবান জানান মাহাথির।
এলএসই’র এই গবেষণা রিপোর্ট বাংলাদেশিসহ এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটির সেকেন্ডারি স্কুল স্টুডেন্টদের মধ্যেও ব্যাপক হতাশা সৃষ্টি করেছে বলেও বিবিসি লন্ডন রেডিও’র লাইভ টকশো অনুষ্ঠানে জানান মাহাথির।
ইয়ার-৯ এর ছাত্র নাহিয়ান যখন টেলিফোনে অংশ নিয়ে ঐ অনুষ্ঠানের আলোচকদের কাছে জানতে চায় ৫ বছর পর তার ইউনিভার্সিটি ভর্তি সময়ে এই বৈষম্য অব্যাহত থাকবে কি না, তখনই এলএসই’র গবেষণা রিপোর্ট ভবিষ্যতে ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টদের জন্যে কতটুকু আতঙ্ক বয়ে নিয়ে এসেছে তা বুঝা যায়।
স: ইএইচ