অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা

দেশের অন্যতম বড় বেচাকেনার অনলাইন হাট হলো বাংলাদেশব্র্যান্ডসডটকম। ২০০৯ সালে এই পোর্টালটির যাত্রা শুরু হয়। দিনে দিনে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এবারের ঈদে এই পোর্টালের ব্যবসা বেশ ভালো।অনলাইনে কেনাকাটা
রং, এক্সট্যাসি, সাদা-কালো, মেন্সক্লাব, প্রবর্তনা, নগরদোলাসহ দেশের প্রধান ৩৯টি ফ্যাশন হাউসের পণ্য এখান থেকে কেনা যায়। সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি-পাজামা, শার্ট, শাড়িসহ ২১ হাজারেরও বেশি রকমের কাপড় পাওয়া যায় এই ওয়েব পোর্টালে।
এবারের রমজানে এই পোর্টালের মাধ্যমে ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই জামা-কাপড়। কয়েক হাজার ক্রেতা এই পোর্টালের মাধ্যমে তাঁদের ঈদের কাঙ্ক্ষিত পোশাকটি কিনেছেন। ২৫ জুলাইয়ের পর এই পোর্টালে আর কোনো নতুন অর্ডার নেওয়া হয়নি। গত বছর এই পোর্টালের মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল।
এই অনলাইন পোর্টাল পরিচালনা করে ফিউচার সলিউশন ফর বিজনেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদেকা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার অনলাইনে ঈদের কেনাকাটায় বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। রোজার মাসে রাজধানীতে তীব্র যানজট হয়। তাই এই যানজট এড়াতে অনলাইনে কেনাকাটা করেছেন অনেকে। আমরা ক্রেতার পণ্যটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বাসায় পৌঁছে দিই।’
এভাবেই অনলাইনে ঈদের জমজমাট কেনাকাটা চলছে। মূলত যানজটের ঝক্কিঝামেলা এড়িয়ে গ্রাহককে একটু স্বস্তি দিতেই এমন অনলাইন পোর্টাল চালু হয়েছে। ঈদের সময় এসব পোর্টালের বেচাকেনাও বেড়ে যায়।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র যানজটের কারণে বিপণিবিতানে যাওয়ার পরিবর্তে ঘরে বসেই এবার অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা সেরেছেন। ভোগান্তিহীন নির্বিঘ্ন কেনাকাটার মাধ্যম এখন অনলাইন পোর্টালগুলো। এসব পোর্টাল থেকে আপনজনদের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, শার্ট, পাজামা ইত্যাদি কিনছেন ক্রেতারা।
গ্রাহকের ঘরে বসে কেনাকাটার এই সেবা দিতে বেশ কিছু অনলাইন পোর্টালও চালু হয়েছে। এবার এসব পোর্টাল-মালিকের বেচাকেনাও বেশ ভালো। অনলাইন পোর্টালের বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও কেনাকাটা চলছে।
বাংলাদেশব্র্যান্ডসডটকম, বিক্রয়ডটকম, ওএলএক্স, সেলবাজার, এখনিডটকমসহ বাংলাদেশে ৪০টির বেশি অনলাইন পোর্টাল রয়েছে, যেখান থেকে ঈদের কেনাকাটা করেছেন অনেকে। নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও এবারের ঈদের প্রায় ১৫ কোটি টাকার অনলাইনে বেচাকেনা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অনলাইন পোর্টালে গিয়ে কোনো পণ্য অর্ডার করলে তিন-চার দিনের মধ্যেই ক্রেতার হাতে পৌঁছে যায়।
দেশের অন্যতম বড় ফ্যাশন হাউস আড়ংয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করার সুযোগ রয়েছে। চলতি রোজায় প্রতিষ্ঠানটি অনলাইন কেনাকাটার ব্যবস্থা চালু করেছে। তাই এবার অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করেছেন। এমন একজন হলেন উত্তরার বাসিন্দা কামরুন নাহার। তিনি গত সপ্তাহে পাঁচ হাজার টাকায় একটি জামা অর্ডার করেছেন। ভিসা কার্ডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের তিন দিনের মাথায় তাঁর বাসায় সেই কাঙ্ক্ষিত জামাটি পৌঁছে গেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিসের পাশাপাশি যানজটের কারণে এবার ঘরে বসেই জামাটি কিনেছি। আর আড়ংয়ের পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না থাকায় নিশ্চিন্ত মনে অনলাইনেই অর্ডার করেছি।’
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসরত অনেক প্রবাসী বাংলাদেশে থাকা আত্মীয়স্বজনের ঈদ পোশাকের জন্য আড়ংয়ে অর্ডার করেছেন। বাংলাদেশে থাকা সেসব আত্মীয়স্বজনের কাছে সেই পোশাক পাঠিয়ে দিয়েছে আড়ং কিংবা এখনো পাঠাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক অর্ডার পাচ্ছে আড়ং।
এ ছাড়া এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ঈদের কেনাকাটা চলছে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে কয়েক শ ফেসবুক শপ তৈরি হয়েছে। ঘরে বসেই এই ব্যবসা করেন উদ্যোক্তারা। আবার ক্রেতারা নিজের ব্যস্ততা ও যানজটের ঝক্কি-ঝামেলার কারণে বিপণিবিতানে গিয়ে পণ্য কেনার সময় পান না। তাই অনেকে ফেসবুক শপের আশ্রয় নেন। ফেসবুক শপ থেকে পছন্দমতো পণ্য কেনেন। ক্রয়াদেশ দিলে উদ্যোক্তারা সেই পণ্য ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দেন।
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা খালেদা নার্গিস এক বছর ধরে ফেসবুক শপ থেকে কেনাকাটা করেন। এবার ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ফেসবুক শপে ঘোরাঘুরি করে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ কিনেছেন।
ঈদ সামনে রেখে রোজার আগে চালু হয়েছে ফ্যাশনওয়েব নামের এই একটি ফেসবুক শপিং পোর্টাল। এই শপ থেকে শাড়ি ও টি-শার্ট বিক্রি হচ্ছে। তিন থেকে সাড়ে চার হাজারের মধ্যে শাড়ি, আর ১৮০ থেকে ২৭০ টাকায় টি-শার্ট বিক্রি হয়েছে। পণ্য পছন্দ হলে ৫০ শতাংশ দাম বিকাশ করে দিলেই পণ্যটি ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক শপিংয়ে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
জিনাত জোয়ার্দার চার মাস ধরে ‘ঢং’ নামের ফেসবুক শপ চালাচ্ছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ডিজাইনের বিভিন্ন গয়না, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ পাওয়া যায়। ঈদ উপলক্ষে বেশ অর্ডারও পেয়েছেন। অর্ডার দিলে দুই দিনের মধ্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছে যায়।
ফেসবুকে গিয়ে দেখা গেছে, সুহানি’স কালেকশন, জেএস ক্রিয়েশন, রেজোয়ান অনলাইন শপিং, এওয়াইএস, মুনসন অনলাইন শপিং—এমন অনেক অনলাইন ফেসবুক শপ রয়েছে। এসব ফেসবুক শপে পাঞ্জাবি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, জুয়েলারিসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যই পাওয়া যায়।#

 

Post MIddle

আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট