রাবিতে সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র, অলস সময় কাটাচ্ছে নিরাপত্তারক্ষীরা

ঈদকে সামনে রেখে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেয়ে ছিনতাইকারী চক্র। তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে নানা উপায়ে ছিনতাই চালিয়ে যাচ্ছে। তবে চুরি-ছিনতাই ও বহিরাগতদের ঠেকাতে পুলিশ সদস্য ও নিরাপত্তাকর্মীদের রাখা হলেও তারা এ কাজে ব্যর্থ হয়েছে। কার্যত তারা এখন রাবিতে অলস সময় পার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  RU
তবে বিশ্ববিদ্যায়ের প্রক্টর তারিকুল হাসান বলেন, ছিনতাই ঠেকাতে ক্যাম্পাসে সার্বক্ষনিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও বহিরাগতদের ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি গেটে ও পয়েন্টে নিরাপত্তাকর্মী রাখা হয়েছে। কিন্তু তারপরও যদি ছিনতাইকারীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায় তাহলে করার কিছুই নাই।
জানা যায়, জুলাই মাসের গত ২০ দিনে রাবিতে অন্তত ৬টি ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটেছে।  গত ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনের নিচ থেকে দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইবরাহীম হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীর বাইসাইকেল চুরি হয়। তিনি সকালে সাইকেল রেখে ক্লাস করে ফিরে এসে আর তা দেখতে পায়নি। একইভাবে ১০ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আরও একটি বাইসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে। এরপর ১৪ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলা ভবনের নিচ থেকে একটি সাইকেল চুরি হয়। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি  বিভাগের চতুর্থ বর্ষের রুহুল আমীন নামের এক শিক্ষার্থী ভনের নিচে ক্লাস শেষে ফিরে এসে আর সাইকলেনটি পাননি।  গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাত ৮টার দিকে নবাব আব্দুল লতিফ হলের পেছনে ছিনতাইকারীদের কবলে পরেন শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আজিমুল হক। কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ওই শিক্ষার্থী ছিনতাইকারীদেরকে টাকা ও মোবাইল দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ডান হাতে ছুরি মেরে পালিয়ে তারা। পরে আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। এরপর গত ১৮ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবলিশ মাঠে ছিনতাইকারীদের কবলে পরেন এক ছাত্রী। ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এছাড়াও ক্যাম্পাসে একের পর এক ঘটেই চলেছে ছিনতাই ও চুরির ঘটনা।
বছরের অন্য মাসে তা কম থাকলেও ঈদের আগে তা বেড়ে যায় বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। আগামী ২২ জুলাই থেকে ঈদের ছুটিতে এরই মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে ফাঁকা ক্যাম্পাসে ছিনতাই আরও বেড়ে যেতে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে ক্যাম্পাসে চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেলেও অতিরিক্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করার জন্য আলাদা কোন সাইকেল গ্যারেজ না থাকায় ফলে ভবনের সামনে সাইকেল রেখেই ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে ছিনতাইকারীরা সহজেই সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ও কাজলা গেট, প্রধান ফটক, পশ্চিম পাড়ার মাজার গেট, রেল গেট, চারুকলা গেট ও বধ্যভূমি এলাকায় সার্বক্ষণিক ৫ জন করে পুলিশ ও একজন করে নিরাপত্তাকর্মী (প্রহরী) রাখা হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না ছিনতাই ও বহিরাগতদের প্রবেশ। এছাড়াও ক্যাম্পাস ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার, বহিরাগত ও ছিনতাই ঠেকাতে গত বছরের ২৫ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভিন্ন ধরণের একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোটরসাইকেল ও গাড়ীতে স্টিকার লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়। তারপরও কোনো কাজ হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, পরিবেশ নষ্ট করতে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে চলাচল করলেও তাদের বাধা দেয়া হয় না। বহিরাগতরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে বসে প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও অসামাজিক কার্যক্রম করলেও তাদের বাধা দিচ্ছে না প্রশাসন।
ক্যাম্পাসের ৭টি গেটে ৩০ জন পুলিশ ও ৭ জন নিরাপত্তাকর্মী  এবং ক্যাম্পাসে সার্বক্ষনিক দায়িত্বে থাকা দেড় শতাধিক পুলিশসহ শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, তারা যেন অলস সময় কাটাচ্ছে। তারা দায়িত্বে থাকার পরেও থেমে নেই চুরি-ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনা।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে গত কয়েক দিন ধরে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্বর ও মাঠগুলোতে ওঁৎ পেতে বসে থাকছে ছিনতাই করার জন্যে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাঁকা স্থানগুলোকে তাদের ছিনতাইয়ের উপযুক্ত স্থান হিবেসে বেছে নিয়েছে। ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশী ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে হবিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের মাঝামাঝি জায়গায়, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের মাঝামাঝি মাঠে, পুরাতন ফোকলোর মাঠ, প্যারিস রোড, জুবেরী মাঠ, পশ্চিম পাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম এলাকা ও স্টেডিয়াম এলাকায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তারিকুল হাসান বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের ঠেকাতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের দায়িত্ব ভালো ভাবেই পালন করছে।
নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, জুলাই মাসে এ পর্যন্ত ক্যাম্পাসের চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। কোনো শিক্ষার্থীও এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশ সদস্যরা সতর্কতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।###

Post MIddle

স:আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট