বছরে ৩৫ জনের ভর্তির সুযোগ থাকলেও ৬১ বছরে রাবিতে পড়েছেন ৩ বিদেশী!

20140624073230_Rajshahi Universityরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ৩৫বিদেশী শিক্ষার্থীর পড়ার সুযোগ থাকলেও ৬১বছরে এখানে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৩জন বিদেশী। এরা হলেন নেপালের দুই জন ও আমেরিকার একজন। পড়ার ভালো পরিবেশ না পাওয়া ও সহিংস ছাত্ররাজনীতির কারণেই অনেক বিদেশী এখানে পড়তে এসেও আগ্রহ হারিয়ে আবার তারা দেশে চলে যাচ্ছে।

বর্তমানে রাবিতে অধ্যায়ন করছে একজন বিদেশী শিক্ষার্থী। তিনি এসেছেন নেপাল থেকে। তার নাম রনজিৎ মলি¬ক। তিনি এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী এন্ড ভেটেরিনারী সায়েন্স বিভাগের সম্মান শ্রেনীতে চতুর্থ বর্ষে অধ্যায়ন করছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যাালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে ১১জন নেপালী পড়তে আসলেও ভর্তি হয় মাত্র ১জন। ১৯৯৭-১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষে ফার্মেসী বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে প্রথম ভর্তি হয় নেপালী শিক্ষার্থী বিনোদ কুমার দাস। আমেরিকান নাগরিক ম্যাথিউ এরিংটন ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষে সম্মান শ্রেণীতের ফোকলোর বিভাগে ভর্তি হন।

বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদে ১০জন, কলা অনুষদে ১০জন, ব্যবসা অনুষদে ৫জন, আাইন অনুষদে ৫জনসহ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজে (আইবিএস) ৫জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষাথীরা কেন ভর্তি হচ্ছে না এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা সাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, ‘বিদেশী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্যে ভালো পরিবেশ না থাকায় তারা এখানে এসে পড়াশোনার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতির ভয়াবহতাও বিদেশী শিক্ষার্থী না আসার কারণ হতে পারে।’

Post MIddle

বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বিদেশী শিক্ষার্থী রনজিৎ-এর কাছে ক্যাম্পাসের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পড়তে এসেছি উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায়। কিস্তু ক্যাম্পাসে সহিংস ছাত্ররাজনীতির এই খারাপ অবস্থা দেখে এ ক্যাম্পাসে পড়ালেখা শেষ করে যাওয়ার ব্যাপারে আমাকে আতঙ্কিত করে তুলেছে।

হল জীবন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়সহ হলগুলো ছুটি হলে অনেক বেশী সমস্যায় পড়তে হয়। এতে করে নিজের দেশেও যেতে পারি না আবার বিশ্ববিদ্যালয় হলেও থাকতে পারি না। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়ে অনেক টাকা খরচ করে দেশে চলে যেতে হয়।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আসলাম হোসেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বিদেশী শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য মীর আব্দুর কাইয়ুম ডরমেটরি বা অন্য যে কোন হলের একটি অংশ বরাদ্দ রাখার কথা থাকলেও বিদেশী শিক্ষার্থীরা এখানে ভৃর্তি না হওয়ায় প্রশাসনও তাদের জন্য কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তারা ভর্তি থাকলে তাদের হলের জন্য একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করা যেত।’

এ ক্যাম্পাসে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে যদি বিভিন্ন বিভাগের অগ্রগতির বিষয়গুলো নিয়মিত রাখা যেত তাহলে বিদেশীদের আকর্ষণ আমাদের দিকে ধাবিত হতো। এতে করে তাদের সাথে আমাদের নানা মুখি যোগাযোগ বৃদ্ধি পেত।’

বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ইমিরেটাস ড. অরুণ কুমার বসাক কাছে অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়েও বিদেশী শিক্ষার্থীরা এসে ভীর করতো যদি আমরা তাদের পড়াশুনার জন্য ভালো পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদেরকে সব ক্ষেত্রে আনন্দ দিতে পারতাম। কেননা পড়ালেখার জন্য চাই আনন্দ, আর বিদেশীরাও তাই চায়।’

উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই রাবি মাত্র ৭টি বিভাগের ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম রাজশাহী কলেজ কমপে¬ক্সে শুশুরু হলেও পরবর্তীতে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ও অফিস মতিহারের সবুজ চত্বরে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদের অধীনে ৫০টি বিভাগে অন্তত ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিক্ষক রয়েছে অন্তত ১২০০। ছাত্রছাত্রীদের থাকার জন্য রয়েছে ১৭টি আবাসিক হল।

পছন্দের আরো পোস্ট