ইবিতে ঋণের নামে মাদরাসার ২৫ কোটি টাকা হরিলুটের পাঁয়তারা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ, জমি ক্রয়, গাড়ী এবং ফ্লাট ক্রয়ের জন্য ঋণের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভূক্ত মাদরাসার ২৫ কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারার পাঁয়তারা শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোন প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তড়িঘড়ি করে অর্থ কমিটির একপেশে ত্রুটি যুক্ত নীতিমালার সুপারিশ সাপেক্ষ ২৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি আসন্ন সিন্ডিকেটে পাশ করাতে যাচ্ছে বলে জানাগেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী এ টাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারী বঞ্চিত হচ্ছে বলে নীতিমাল সূত্রে জানাগেছে। এতে ঋণ বঞ্চিতরা কঠোর আন্দোলনে হুমকি দিয়েছে।
প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স কমিটি (এফসি) সূত্রে জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৪ শ ফাজিল-কামিল মাদরাসার পরীক্ষার ফরম পুরণ, নিবন্ধন ফি, পরীক্ষার ফি,সনদপত্র ও নম্বরপত্র উত্তোলনসহ অন্যান্য খাত থেকে সংগৃহীত ২৫ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ,জমিক্রয়, গাড়ী ও ফ্লাট ক্রয় বাবদ ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। ঋণ প্রদানের জন্য ইতিমধ্যে গত ২০,০৫,২০১৪ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স কমিটির ১৫০তম সভায় খসড়া নীতিমালা সুপারিশ করেছে বলে জানাগেছে। ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নূন্যতম ১০ বছরের স্থায়ী চাকরি থাকতে হবে। প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এই ঋণ প্রদান করা হবে, বছরে ২ বার (জানুয়ারি ও জুলাই) মাসে এ ঋণ প্রদান করা হবে বলে জানাগেছে। এছাড়া নীতিমালায় ঋণ পরিশোধেন সুিনদিষ্ট কোন নিয়ম উল্লেখ নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ নীতিমালা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঋণের সুবেধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে গাড়ী ক্রয় লোন বাবদ ২২ লক্ষ টাকা দেওয়া হলেও গৃহ নির্মাণ বাবদ দেওয়া হচ্ছে কেবল মাত্র ৮ লক্ষ টাকা। ব্যাক্তি বিশেষের সুবিধা দিতে এমনটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষকরা।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে না করার শর্তে বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাধিক শিক্ষক বলেন,“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যাক্তি বিশেষের সুবেধা দেওয়ার জন্য ঋণের নীতিমাল তৈরি করেছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী ঋণ প্রদান করলে হাতেগনা কিছু শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ সুবেধা ভোগ করবে। আর বাকিরা এ ঋণ থেকে বঞ্চিত হবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একপেশে সিদ্ধান্তে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ঋণ বঞ্চিত শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারা বলেন,“২৫ কোটি টাকা হরিলুটের জন্য প্রশাসন যে নীল নকঁশা তৈরি করেছে সেটি সফল হতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন করা হবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কোন কাজ না করে কেবল মাত্র ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিলে ২৫ কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা। শিক্ষকরা জানান-“ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ব্যবহার করতে পারত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যা দুর করার জন্য আবাসিক হল তৈরি করা যেত । কর্তৃপক্ষ চাইলে এ টাকা দিয়ে কয়েকটা আধুনিকমানের ভবন তৈরি করতে পারত। শিক্ষকরা আরও বলেন, বিলাস বহুল গাড়ী ক্রয়ের জন্য ২২লাক্ষ টাকা না দিয়ে গৃহ নির্মণ, ফ্লাট ক্রয়ের জন্য ঋণ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
এদিকে সম্প্রতি দেশের মাদরাসা সমূহ নিয়ে গঠিত আরবী বিশ্ববিদ্যালয় বিল মন্ত্রীসভায় পাশ হওয়ার পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৫ কোটি টাকা ঋণ আকারে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদের্রেছিনের মহাসচিব সাব্বির আহমাদ মমতাজি। তিনি বলেন,“ মাদরাসর টাকার হিসাব চেয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তিনবার চিঠি দিয়েছে। এছাড়া সিন্ডিকেট মিটিংয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অতিরুক্ত সচিব ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সালাহউদ্দিন আকবারও মাদরাসার টাকার হিসেব চেয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরে হিসেব দেওয়া হবে বলে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
এবিষয়ে ট্রেজারার প্রফেসর ড. আফজাল হোসেন বলেন,“ ২৫ কোটি টাকা ঋণ আকারে দেওয়া হচ্ছে এটা সত্য। যাদের চাকরি দশ বছর স্থায়ী তাদেরকে প্রথামিক ভাবে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। বাকিদেরকে পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।
ঋণ পরিষদের প্রক্রিয়া কেমন হবে যানতে চাইলে তিনি বলেন, ১২০ কিস্তিতে এ টাকা পরিশোধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক,কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে কেন ঋণ দেওয়া হচ্ছে না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন,“ঋণ দেওয়ার আগে পরিশোদের বিষয়টিও আমাদেরকে ভাবতে হচ্ছে।