বরিশালের শ্যামপুর স্কুলের বেহলা দশা
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের অধিক ঝুকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস।
ভবনটির এমনই বেহাল দশা যে, একটু বৃষ্টি নামলেই ছাদ থেকে পানি পরে শিক্ষার্থীদের বই-খাতা ভিজে একাকার হয়ে যায়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদের কয়েকটি স্থানে বড় বড় ফাটল ধরেছে। ফলে যেকোন মুহুর্তে ছাদ ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনটি রুম বিশিষ্ট একটি একতলা পুরানো ঝুঁকিপূর্র্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হচ্ছে। প্রত্যেকটি ক্লাশরুমে একসঙ্গে দুটি করে ক্লাশের পাঠদান করাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মক ভাবে ব্যহৃত হচ্ছে।
উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার স্বর্গীয় হিরন্য কুমার রায় চৌধুরী ১৯৩২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে বিদ্যালয়টি ওই এলাকার শিশু-কিশোরদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। ১৯৪৭ সালে বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনে হিন্দু-মুসলিমদের দাঙ্গার কারনে বিদ্যালয়টি কয়েক বছরের জন্য বন্ধ হয়ে য়ায়।
পরে ১৯৫৯ সালে তৎকালীন স্থানীয় সমাজ সেবক আবদুর রাজ্জাক মিয়া বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে আর থেমে থাকেনি বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম।
১৯৬০ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্তি হলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়। মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যালয়টি সুনামের সাথে বাকেরগঞ্জের মধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। অত্র বিদ্যালয়টি স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় বাকেরগঞ্জ উপজেলার মুক্তিবাহিনীর একমাত্র ক্যাম্প ছিলো। যারফলে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী বিদ্যালয়টিতে অগ্নিসংযোগ করে।
ওইসময় অগ্নিকান্ডে এলাকার অসংখ্য নিরিহ ছাত্র ও মুক্তিযোদ্ধারা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়।
স্থানীয় একাধিক মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বিদ্যালয়টি বাকেরগঞ্জ থানার মধ্যে একমাত্র মুক্তি ক্যাম্প থাকা সত্বেও আজ পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নিজামুল কাদির জানান, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ছয়শ’ শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে এ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার পাশের হার শতকরা ৯৬ শতাংশ।
বিদ্যালয়টি অধিক ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় বর্তমানে অসংখ্য শিক্ষার্থীরা প্রাণভয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। আবার অনেকেই অন্য কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিদ্যালয়ে সরকার প্রদত্ত কম্পিউটার, ল্যাবটব ও মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি থাকা সত্বেও শুধুমাত্র ক্লাস রুমের অভাবে শিক্ষাথীদের ব্যবহারিক পাঠদান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংস্কার ও নতুন ভবনের আশায় ইতোমধ্যে একাধিকবার স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে আবেদন নিবেদন করেও কোনো সুফল মেলেনি।
স: ইএইচ