বছরে নষ্ট হচ্ছে ঢাবি’র ৪০০ আসন
প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেকই দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় বসে, যা সদ্য এইচএসসি পাশ করে আসা শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ কমিয়ে দেয়।
প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে অথবা কৃতকার্য হয়েও পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ না পেয়ে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয় অনেকে।
শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তনের এই প্রবণতার কারণে বছরে প্রতি সেশনে শূন্য হয়ে যায় প্রায় ৪০০ আসন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত গত ৩ বছরের ভর্তিপরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা যায় এ তথ্য।
বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই যোগ্যতা থাকলে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে শিক্ষার্থীরা। আর তাই পছন্দমতো বিভাগ পেয়ে প্রচুর শিক্ষার্থী অন্য বিভাগে চলে গেলে অনেক আসন শূন্য হয়ে যায়। প্রথম বর্ষের মাঝামাঝি পর্যন্ত পড়েও চলে যায় অনেকে।
প্রথমবারের মতো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনেকেরই দাবি, আগের বছরের শিক্ষার্থীরা তৈরি হওয়ার জন্য বেশি সময় পাচ্ছে।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ বলেন, অনেক শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসায় অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আসনও শূন্য হয়ে যাচ্ছে।
এটাকে ‘ভর্তি চক্র‘ অভিহিত করে মামুন বলেন, এর ফলে প্রতি বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার আসন শূন্য পড়ে থাকে। তিনি বলেন, “আমরা শুধু বিভাগ বদলে চলে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যাটা জানি, কিন্তু দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে কতজন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যায় সেটা জানি না।”
এ ধরনের চর্চা বন্ধ করার জন্য ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চালু হয়েছে এ নিয়ম।
বুয়েট কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মাসুদ বলেন, “আসন শূন্য পড়ে থাকার অর্থ হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ৪২১ আসন, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ৪১৬, এবং ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ৪২৯টি আসন শূন্য পড়ে ছিল।
সূত্র জানায়, ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি কমে প্রতিষ্ঠানের আয় কমে যাবে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করতে চায় না।
তবে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই নিয়ম বদলানো উচিত। তিনি বলেন, যারা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে বিভাগ পরিবর্তন করছে তারা দুটি আসন দখল করে রাখছে। এতে অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হারাচ্ছে। তা ছাড়া প্রথমবার আর দ্বিতীয়বার বসা শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিও সমান নয়। এই নিয়মে যথাযথ মূল্যায়ন সম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি নাসরিন আহমেদ এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমরা প্রতি বছরই এই শূন্য আসনগুলো পূরণ করার জন্য ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী নিচ্ছি।”
স: ইএইচ