ইবি’র শিক্ষক রাজনীতি। জোটে কোন্দল মহাজোটে ঐক্য
জাতীয় রাজনীতির সাথে তাল মিলিয়ে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষকদের রাজনৈতিক ক্ষমতার উত্থান-পতন। রাজনীতির বানে গাঁ ভাসিয়ে অনেক শিক্ষক তাদের প্রকৃত দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে পড়লেও দলীয় লবিং-গ্রুপিং ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে নেই। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হয়েছে শিক্ষক রাজনীতির অভয়াশ্রমে।
এর থেকে মোটেও পিছিয়ে নেই কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের শিক্ষক থাকলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও সরকারপন্থী মহাজোটের রাজনীতিই কেবলমাত্র বিদ্যমান। আভ্যন্তরীণ কোন্দল সহ নানা কারণে বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত পন্থী শিক্ষক জোট অনেকটায় কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছে।
অন্যদিকে ব্যক্তি কোন্দল ও মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ঐকমত্যের আলোকে এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী ও প্রগতিশীল শিক্ষক জোট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেতৃত্ব প্রদানে অযোগ্য ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞাহীন ব্যক্তিদের উত্থান, দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রবীণ শিক্ষদের উপেক্ষা সহ বিভিন্ন কারণে ২০ দলীয় জোটে অন্তঃকোন্দল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সংগঠন শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব দিয়ে আসলেও এবারই প্রথম সমিতির নের্তৃত্ব-কর্তৃত্ব হারিয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতির কর্তৃত্ব হারানোর পেছনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক সংগঠন জিয়া পরিষদ ও গ্রীণ ফোরামের নেতাদের দুরদর্শিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন সিনিয়র শিক্ষকরা।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে নিজ দলের একটি গ্রুপের আঁতাতের ফলে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী জোটের ভরাডুবি হয়েছে বলেও অনেক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন। সেই সাথে ছাত্রদলের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে এর অভিভাবক সংগঠন হিসেবে পরিচিত শিক্ষক সংগঠন জিয়া পরিষদ।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘জিয়া পরিষদের নেতারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, ক্যাম্পাসে ছাত্রদল এবং জোটের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের অভিভাবক সংগঠন জিয়া পরিষদ।’ এর পেছনে জিয়া পরিষদের দূর্বল নের্তৃত্বকেই দায়ী করেন ছাত্রদল নেতারা।
অন্যদিকে আওয়ামী ও বামপন্থী শিক্ষকদের পৃথক দুটি সংগঠন থাকলেও দলীয় ও পারস্পারিক ঐক্যমতের ভিত্তিতেই চলছে মহাজোটের শিক্ষক রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের প্রচেষ্টার ফলে সরকার পন্থী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের মধ্যে এ ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এবছরই প্রথম শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করেছে আওয়ামী ও প্রগতিশীল শিক্ষকদের জোট।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ চালুর ব্যাপারে অর্গানোগ্রাম পাশ না করে এবং একাডেমিক কাউন্সিলে বিএনপি-জামায়াতের সিনিয়র সদস্যদের মতামত ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কয়েকটি নতুন বিভাগ চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পেছনে ক্যাম্পাসের রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াতের দূর্বল ভূমিকার কারণে অর্গানোগ্রামের অবৈধ কাজটিও বৈধ করে নিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ফলে ক্রমেই সেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম নূরী বলেন, ‘সরকারের কতিপয় দালাল শিক্ষক বিএনপির নাম নিয়ে সংগঠনের মধ্যে কোন্দল ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। বর্তমানে জিয়া পরিষদের কার্যক্রমের ব্যাপারে যে সব অভিযোগ আসছে তা ভিত্তিহীণ ও হাস্যকর। আমি দলীয় আদর্শের ভিত্তিতেই জিয়া পরিষদে কাজ করে যাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রুহুল কুদ্দুস মো. সালেহ বলেন, ‘শত মতপার্থক্যের উর্ধ্বে উঠে দলীয় আদর্শের ভীত্তিতে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এই ঐক্যবদ্ধতা সামনের দিনেও অটুট থাকবে।’
এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ ভুলে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা ঐক্যমতে পৌঁছেছি। আশাকরি এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
নবীন/স:আরএইচ