৬২ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠা হয়ে আজ ৬২তম বছরে পা রাখলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে রোববার গৌরবের ৬১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
RU Pic1b 06.07.2014দিবসটি উপলক্ষে রোবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন চত্বরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা এবং প্রাধ্যক্ষরা নিজ নিজ হলের পতাকা উত্তোলন করেন। পরে শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা ও বর্ণিল বেলুন-ফেস্টুন ওড়ানো হয়। এরপর সিনেট ভবনের সামনে একটি বৃক্ষরোপণ করেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। পরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
এই আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৬১ বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশে যুগোপযোগী উচ্চশিক্ষা ও মৌলিক গবেষণার বিস্তারে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনি বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও প্রসারের মাধ্যমে আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশ, জাতি ও সমাজকে আলোকিত করা ছাড়াও জাতির উন্নয়নে এক গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী।
RU Pic3 06.07.2014আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তেব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গত ৬১ বছরের ইতিহাস কখনই ভোলার নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ক্যাম্পাসকে যত প্রতিকূলতা পার করতে হয়েছে যা দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে করতে হয়নি। কিন্তু তারপরও শিক্ষা ও গবেষণাসহ সকল বিষয়ে অবদান রেখেই যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। তাই আমার মনে হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ই দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রি আরও বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধে অবদান রাখা এই ক্যাম্পাসটি ভবিষ্যতে তার ধারা অব্যাহত রাখবে। এ জন্য এখনকার শিক্ষার্থীদের সেই ভাবেই নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্রের কতোটা চর্চা হচ্ছে তা আমাদের বিবেচনা করতে হবে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ও রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি জাতির বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বীরোচিত অবস্থান রয়েছে। এদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জোহা ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন দায়িত্বনিষ্ঠ শিক্ষক। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী শহীদ হয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত সাফল্য ও গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারা অক্ষুন্ন রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও রেজিস্ট্রার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্ঠা সাদেকুল আরেফিন মাতিন।

Post MIddle

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বর্তমান অবস্থা।

রাজশাহী অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষা পিপাসু জনগন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চিন্তা থেকে ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর সমস্ত কলেজ সমূহকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্তকরণের ঘোষণা এলে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ এ্যাসেম্বেলীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অডিন্যান্স পাশ হয়। প্রতিষ্ঠার পর প্রফেসর ড. ইতরাৎ হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
১৯৫৩-৫৪ শিক্ষাবর্ষে ৭টি বিভাগে (দর্শন, ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজী, অর্থনীতি, গণিত ও আইন) ১৬১ শিক্ষার্থী নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদের অধীনে ৫০টি বিভাগে পড়াশুনা করছেন অন্তত ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ১২ শতাধিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য ১৬টি আবাসিক হলসহ গবেষকদের জন্য রয়েছে একটি ডরমেটরি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৩৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মধ্যে সরকারি ১৭টি, বেসরকারি ২০টি। রয়েছে ৫টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট।

 

পছন্দের আরো পোস্ট