আকাশে মেঘ জমলেই বন্ধ পাঠশালা
দরজা-জানালা নেই। মরিচাধরা টিনের ছিদ্র দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। বসার আসবাবপত্র নেই।
কষ্টে আনন্দের শিক্ষা কার্যক্রম নিরানন্দে পরিণত হয়েছে। আকাশে মেঘ জমলেই বন্ধ হয়ে যায় কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। চারপাশে বেড়াও নেই।
এ বিদ্যালয়টি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বোকাইনগর ইউনিয়নে অবস্থিত।
তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়টি নাম গড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয় গৃহের চারপাশের বেড়া নেই। মুরগী মাটি আঁচড়িয়ে তৈরি করেছে গর্ত। বসার কোনো বেঞ্চ নেই। শিক্ষকদের বসার অফিস নেই।
শ্বাস কষ্টে আক্রান্ত ৪র্থ শ্রেণির রোজিনা আক্তার। বারবার হাঁচির জন্য ক্লাস করাই দায়।
ডাক্তার ধুলাবালিতে যেতে নিষেধ করেছে। তবে বিদ্যালয়ে মাটিতে বসে ক্লাস, এ যেন ধুলাবালির সঙ্গে বসবাস। মাথায় বহন করে আনতে হয় বস্তা (চট)। ছট নেই তাই শিক্ষার্থীরা সিমেন্ট, সার বা ধানচালের পরিত্যক্ত বস্তায় বসেই পড়তে হয়।
রুবেল মিয়া ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ প্রতিনিধিকে দেখেই বললেন, এবার কি নূতন ইস্কুল হবে! সে আরও জানায়, জামা-কাপড়ে ধুলাবালির জন্য প্রতিদিনই মাকে ধুয়ে দিতে হয়।
বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণিতে ৫৪জন, ১ম শ্রেণিতে ৬৬জন, ২য় শ্রেণিতে ৬২জন, ৩য় শ্রেণিতে ৪৪জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৪৩জন ও ৫ম শ্রেণিতে ৩৬জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।
অভিভাবক সোহেল রানা জানান, স্কুলের ঘরের নেই, ভাঙা ঘর তাই শিশুরাও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে স্বাস্থ্যহানি ঘটচ্ছে। ৪র্থ শ্রেণির আয়শা আক্তার জানায়, বিস্কুট দেয়, পানি খাওয়ার কোনো নলকূপ নেই।
শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের প্রকৃতির কাজ সারার ব্যবস্থা নেই । পাশের বাড়িতে গেলেও নানা বকা শুনতে হয় বলে জানান, ৫ম শ্রেণির রুনা আক্তার।
সহকারি শিক্ষকরা জানালেন, বর্ষার দিনে বৃষ্টিতে অফিসিয়াল কাগজপত্র নষ্ট হচ্ছে। বই রাখার জায়গা নেই।
মাটিতে বসে পড়তে গিয়ে ধোলাবালিতে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ও জায়রিয়াসহ নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
বিদ্যালয়টির করুনদশার কথা উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক মো. নওয়াব আলী খান পাঠান জানান, সাময়িক মেরামতের যে টাকা আসে, তাও এ বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্ধ হয় না। নূতন ভবন নির্মাণের জন্য বারবার পত্র দিচ্ছি, কোনো উত্তর নেই।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান মোহাম্মদ জোনায়েদ জানান, আমি এ বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
শিশুদের জন্য নতুন ভবনের দাবি জানিয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সহসভাপতি মকবুল হোসেন জানান, এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের আনন্দ নেই, রোদ-বৃষ্টিতে আছে শুধু কষ্ট।
স: ইএইচ