জার্মানিতে লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা

যদিও জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য টিউশন ফি লাগে না কিন্তু বাড়িভাড়া, খাবার-দাবার, পোশাক-আশাক এসব বাবদ খরচ ও  কম লাগে না৷ বিশেষ করে বিদেশ থেকে পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরা এটা ভালো করেই টের পান৷প্রতি বছর আড়াই লক্ষ বিদেশি ছাত্রছাত্রী ও ২৩০০০ ডক্টরেটের গবেষক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন নেন৷ এঁদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকেন৷ কারন বৃত্তির জন্য আবেদনের প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল৷ সিদ্ধান্ত পেতে পেতে বছরও গড়িয়ে যায় অনেক সময়।

download (6)এক্ষেত্রে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় বেশ কিছু ফাউন্ডেশন৷ ফাউন্ডেশনগুলি ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরেই স্থির করে কাকে তারা কাকে কিভাবে সাহায্য করবে৷

ওয়েল কাম সেন্টার’

images (14)জার্মানিতে আসার পর বিদেশি ছাত্রদের প্রথমেই যেখানে যেতে হয়, তা হলো তথাকথিত ‘ওয়েল কাম সেন্টার’৷ সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন৷ তা সে পড়াশোনা, আর্থিক সমস্যা কিংবা ভিসা সমস্যা যাই হোক না কেন৷ বৃত্তিদাতা ফাউন্ডেশনগুলির ব্যাপারেও ভালো ধারণা রয়েছে পরামর্শদাতাদের৷ কার জন্য কোন ফাউন্ডেশন উপযোগী সে ব্যাপারে তারা বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দিতে পারে৷

তবে বিদেশি ছাত্রদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভাষা শেখা৷ জার্মানিতে দাপ্তরিক ভাষা হলো জার্মান৷ এছাড়া অনেক বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য জার্মান ভাষা জানাটা জরুরি৷

গুরুত্বপূর্ণ ফাউন্ডেশন ডিএএডি

images (11)এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফাউন্ডেশন হলো ‘ডিএএডি‘ বা জার্মান ছাত্র বিনিময় কর্মসূচি৷ বর্তমানে ৪৫,০০০ বিদেশি ছাত্রছাত্রীকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি৷ বৃত্তিভোগীদের ৭০ শতাংশই আসেন বিদেশ থেকে৷ এজন্য ডিএএডি-র নানা ধরনের কর্মসূচি রয়েছে৷ ব্যাচেলর কোর্সের ছাত্রছাত্রীরা মাসে ৬৫০ ইউরো, মাস্টার্সের ছাত্রছাত্রীরা ৭৫০ ইউরো আর ডক্টরেটের গবেষকরা ১০০০ ইউরো পান৷

স্নাতকের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তি পাওয়া সবচেয়ে কঠিন৷ কেননা পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই বৃত্তি দেওয়া হয়৷ ব্যাচেলরের ছাত্রছাত্রীদের বেলায় এটা নির্ণয় করা সহজ নয়৷ অন্যদিকে, মাস্টার্স ও ডক্টরেটের ছাত্রছাত্রীরাব্যাচেলর পরীক্ষায় ভালো ফলাফল দেখাতে পারলে বৃত্তি পাওয়াও সহজ হয়৷ডিএএডির বৃত্তি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ দেশেই বিস্তারিত জানতে পারেন৷ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এসম্পর্কে তথ্যাদি পাওয়া যায়৷

ভাষায় দক্ষতা প্রয়োজন

সব ধরনের সার্টিফিকেট জমা দিতে হয় ইংরেজি ও জার্মান ভাষায়। এক্ষেত্রে দক্ষতার ও প্রমাণ করতে হয়।ভালো ফলাফল করলে মাসে ৭৫০ ইউরো বৃত্তি পাওয়া সম্ভব অনায়াসে৷ এছাড়া যাতায়াত ভাড়া ও বিমার খরচও বহন করা হয় ৷ তবে,প্রাপ্ত এই টাকা দিয়ে খুব বেশি বিলাসিতা সম্ভব নয়৷ কেননা এখানে বাড়িভাড়াই লেগে যায় ৩০০ ইউরোর বেশি৷ তবে বৃত্তির টাকা দিয়ে মোটামুটি চালিয়ে নেওয়া সম্ভব৷

Post MIddle

বিদেশি ছাত্রদের জন্য সুলভ মূল্যে বাড়ি পাওয়াটা রীতিমত সমস্যাজনক৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি দপ্তরের কাছ থেকে কিছু পরামর্শ পাওয়া গেলেও আসল কাজটা ছাত্রছাত্রীদের নিজেদেরই করতে হয়৷ সুলভ মূল্যে একটি বাসস্থান পাওয়া এখানে খুবই কঠিন৷

ক্যাশ টাকা সাথে রাখতে হয়

বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে পাড়ি দিলেও অবশ্যই কিছু ক্যাশ টাকা সাথে রাখতে হয় বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের৷ কারণ ইউনিভার্সিটিতে নাম লেখানো ও নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পরই ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে মাসে মাসে টাকা আসতে শুরু করে৷ আর কেবল তাহলেই জার্মানিতে একটি বাসা ভাড়া করা যায়৷ ‘‘প্রথম তিন সপ্তাহ বিদেশি ছাত্রদের জন্য বলা যায় এক ‘সাংস্কৃতিক শক’ ৷ ‘‘তারা ভাবতেই পারে না যে, অনেক কিছুর সুরাহা নিজেদেরই করতে হয়৷”

তবে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের সাহায্যের জন্য নানা রকম সমিতি ও গ্রুপ রয়েছে৷ যেমন ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটি গ্রুপ কিংবা ইউনিভার্সিটি কমিউনিটি৷ এই সব গ্রুপে স্বদেশিদের সঙ্গে মিলিত হতে পারে বিদেশ থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা৷ তারা বাসা পেতে সাহায্য করে, জার্মানির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পথঘাট খুঁজে পেতে সহায়তা করে৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাথলিক কিংবা প্রটেস্ট্যান্ট গির্জা কমিউনিটিতে সক্রিয় হলে অতিরিক্ত কিছু সুবিধাও পাওয়া যায়৷ যেমন কোনো কোনো কমিউনিটিতে বিদেশি ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষ পেতে পারেন তারা৷

ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন গ্রুপে সক্রিয় হলে জার্মানি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ জীবনে খাপ খাওয়ানো সহজ হয়৷ শুধু পরীক্ষার ভালো রেজাল্টই নয়, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়াটাও অনেক ফাউন্ডেশনের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷”

সামাজিক তৎপরতাকে গুরুত্ব

বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ফাউন্ডেশনগুলি বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়৷ এক্ষেত্রে সিডিইউ ঘরানার কনরাড আডেনাউয়ার স্টিফটুং, এসপিডিপন্থি ফ্রিডরিশ এবার্ট শ্টিফটুং, গ্রিন পার্টির হাইনরিশ ব্যোল স্টিফটুং-এর নাম করা যায়৷ জার্মানিতে আসার পরও এইসব ফাউন্ডেশনের বৃত্তির জন্য আবেদেন করা যায়৷

এই সব ফাউন্ডেশনের বৃত্তি পেতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে হবে এমন কোনো কথা নেই৷ তবে আবেদনকারীরা বিভিন্ন সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি পেতে সুবিধা হয়৷

ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট গির্জার তরফ থেকেও বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়া হয়, তবে সাধারণত স্ব-স্ব ধর্মের অনুসারীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়৷

পছন্দের আরো পোস্ট