ঢাবিতে চুরি-ছিনতাই চরমে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চুরি-ছিনতাই যেন নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই কেউ কেউ না কেউ ছিনতাইকারীর শিকার হয়ে হারাচ্ছেন নিজের মূল্যবান জিনিস পত্র। শুধু রাতের বেলায়ই নয়, দিনের বেলাতেও ঘটছে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা। তবে রাতের বেলা এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।  du
বর্তমানে চলছে ফুটবল বিশ্বকাপের মৌসুম। তাই টিএসসিতে বড় পর্দায় খেলা দেখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়া বহিরাগতরাও এসে  ভিড় জমায়। সবার মত বড় পর্দায় খেলা দেখতে এসেছিলেন কবি জসিম উদ্দিন হলের দর্শন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলাম সুজন।
তিনি খেলা দেখে রিকশাযোগে হলে ফিরছিলেন। তার সাথে একটি ব্যাগে ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল। টিএসসি পার হয়ে সবেমাত্র ভিসি চত্বরের মোড়ে এসে পৌঁছেছেন। ঠিক এমন সময়ে পিছন দিক থেকে অজ্ঞাতনামা তিনজন মোটর বাইক আরোহী তার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে চোখের পলকে স্থান ত্যাগ করে। নীরব নিথর হয়ে সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া তার আর কোন উপায় ছিল না।
পাশেই ভিসি স্যারের বাংলোতে নিরাপত্তা দিচ্ছে কয়েকজন পুলিশ। এর ঠিক কিছুদূর সামনে এগিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আড্ডায় মশগুল। তাদের নাকের ডগা দিয়ে একটু আগেই একদল ছিনতাইকারী ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়ে গেলেও তারা তখনো ঠিক পায়নি।
গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এভাবেই চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিয়মিত এমন অপকর্মের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস যেন হয়ে পড়েছে ছিনতাই, অপহরণকারী আর চোরদের নিরাপদ জোন। শুধু সুজন নয়, গত এক সপ্তাহে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ছিনতাইয়ের শিকার হতে হয়েছে অন্তত ১০ জনকে।
এর আগে গত ৪ জুন অফিস থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সামনে রিকশা থেকে ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়ে যায় অর্থসূচক ডটকমের সিনিয়র রিপোর্টার ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিনের। ল্যাপটপের সঙ্গে তার মূল্যবান কাগজপত্রও ছিনতাই হয়ে যায়।
টিএসসিতে খেলা দেখার জন্য দু’টি বড় পর্দার অনুমতি দিলেও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্বকাপ উপলক্ষে বসানো হয়নি অতিরিক্ত চেকপোস্ট বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে ছিনতাইকারীরা অবাধে তাদের অপকর্ম করে যাচ্ছে।
ক্যাম্পাসের মধ্যে যে কয়টি জায়গায় চেকপোস্ট আছে তাতেও দেখা গেছে অনিয়ম। ক্যাম্পাসে ঢুকতে কোন রকম চেক করা হচ্ছে না। ফলে ক্যাম্পাসে অবাধে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসীসহ অপরাধকারীরা। রাতের অন্ধকারে ক্যাম্পাসকে তারা ত্রাসের রাজ্য বানিয়ে নিয়েছে।
শুধু ক্যাম্পাসই না। হলগুলোতেও এখন একই অবস্থা বিদ্যমান। রুমে ল্যাপটপ, মোবাইল কিংবা কোন প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে একটু সময়ের জন্য বাইরে বের হলেই সেগুলো আর পাওয়া যায় না।
গত ১৩ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নিজ রুম থেকে ল্যাপটপ চুরি হয়ে যায় দর্শন ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী শিমুলের। বালিশের পাশে ল্যাপটপ রেখে রাতে ঘুমিয়ে গেলে সকালে উঠে দেখেন তার ল্যাপটপ নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও তিনি কোন সুরাহা পাননি।
এদিকে ল্যাপটপ ছিনতাইসহ ক্যাম্পাসে সাইকেল চুরির ঘটনাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বার বার ক্যাম্পাসে এমন অপকর্ম ঘটে চললেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নীরব। গত তিন মাসে ১৫টি ছিনতাই, পাঁচটি অপহরণ এবং বেশ কয়েকটি চুরির অভিযোগ আসলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করছেন না।

Post MIddle

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং ক্যাম্পাসের এমন নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী বলেন, কারা এই অকর্মের সাথে জড়িত তা খুঁজে বের করা  অসম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই একটি মহল এ অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।
সম্প্রতি টিএসসিতে বড় পর্দায় খেলা দেখানো প্রসঙ্গে তিনি  বলেন, টিএসসিতে দুইটি বড় পর্দায় খেলা দেখানো হচ্ছে। এখানে বহিরাগতরাও খেলা দেখতে আসে। আর ক্যাম্পাসে তো সবার নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব না। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। #

মিসবাহ/স:আরএইচ

পছন্দের আরো পোস্ট