অক্সফোর্ডের আদলে ‘বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় বাংলা একাডেমির উদ্যোগে অক্সফোর্ডের আদলে সংকলিত বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক অভিধান সম্পর্কে বলতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অক্সফোর্ড অভিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে সময় লেগেছিল ৩৬ বছরেরও বেশি সময়।
অথচ বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক অভিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে সময় লেগেছে মাত্র তিন বছর।
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে সোমবার বিকেলে ‘বাংলা একাডেমি বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’র প্রকাশনা উত্তর এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি।
স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এত অল্প সময়ে এত বিশদ একটি কাজ করা সত্যিই অনেক দুরূহ কাজ। বাংলা একাডেমি সে দুরূহ কাজটি সম্পন্ন করে প্রমাণ করেছে তাদের পক্ষে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নে আরও গবেষণামূলক কাজ জাতিকে উপহার দেওয়া সম্ভব।’
তিন খণ্ডে প্রকাশিত প্রায় সোয়া লাখ শব্দের সমাহার এ অভিধান সম্পর্কে মূল্যায়নে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটি স্বল্প সময়ে পড়ে আমার মনে হয়েছে আমি নতুন শব্দ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন ভাষার ইতিহাসটাই পড়ে ফেলছি। অনেক শব্দের ব্যুৎপত্তিকাল ও অর্থ দেখে তার ধারণাই পাল্টে গেছে বলেও মতামত ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এটি যে ধরনের গ্রন্থ আমার জ্ঞানের স্তর তার থেকে অনেক নিচে। তাই এ অভিধান সম্পর্কে আলোচনা করা আমার জন্য ধৃষ্টতা। স্বল্প সময়ে সংকলিত এ অভিধানে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকা স্বাভাবিক, এ কথা স্বীকার করে তিনি পরবর্তী সংস্করণ প্রণয়নের পূর্বে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার পরামর্শ দেন তিনি।
অভিধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য দেন ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. হাকিম আরিফ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী।
সমালোচকগণ অভিধানের কিছু ত্রুটির কথা তুলে ধরেন। তার মধ্যে রয়েছে লেখকের নামের ব্যবহার। তাদের অভিযোগ- লেখকের নামের উল্লেখ করার সময় সুনির্দিষ্ট মেথডোলজি ব্যবহার করা হয়নি। যার ফলে পাঠকের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও অনুক্রমিক ত্রুটি ও আনুমানিক এবং প্রামাণ্য সন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু অসংগতির কথা তুলে ধরেন।
তবে এত বিশাল একটি কাজে সামান্য ত্রুটি থাকতেই পারে উল্লেখ করে তারা আশা প্রকাশ করেন, পরবর্তী সংস্করণে এসব ত্রুটি দূর করে শুদ্ধরূপে অভিধানটি পাঠকের কাছে আসবে।
সমালোচনার জবাবে অভিধানের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম মুরশিদ বলেন, আমরা স্বীকার করছি যে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, কারণ মাত্র তিন বছরের মধ্যে শেষ করা এ বিশাল কর্মযজ্ঞে কিছু ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক ঘটনা।
তাছাড়া বাংলা সাহিত্যের সমস্ত প্রকাশনা অধ্যয়ন করাও আমাদের পক্ষে স্বল্প সময়ে সম্ভব ছিল না। তা করতে গেলে এ কাজ ৩০ বছরেও সম্পাদন করা যেত কি না সন্দেহ। তারপরেও এ ধরনের একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রণয়ন বাংলাভাষী অঞ্চলের জন্য প্রথম।
স: ইএইচ